দুর্গাপুরে ডাক্তারি পড়ুয়ার গণধর্ষণ! কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে মমতার কাছে আর্জি ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১২ অক্টোবর ২০২৫
দুর্গাপুরে ডাক্তারি পড়ুয়ার গণধর্ষণ ঘিরে উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। দুর্গাপুরের শোভাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি পড়ুয়াকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ উঠল। নির্যাতিতা তরুণীর বাড়ি ওড়িশার জলেশ্বরে। শুক্রবার রাতে এক পরিচিতের সঙ্গে কলেজের বাইরে গিয়েছিলেন ওই পড়ুয়া। সেই সময় কয়েকজন যুবক তাঁদের উত্ত্যক্ত করে বলে অভিযোগ। এরপরই ওই তরুণীকে টেনে হিঁচড়ে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতালে গিয়ে পুলিশ নির্যাতিতার বয়ান নথিবদ্ধ করেছে।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে কলেজের বাইরে বেরিয়েছিলেন ডাক্তারির ওই পড়ুয়া। নির্যাতনের আগে তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল এবং টাকাপয়সা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পুরুষ সঙ্গীকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই সময় পালিয়ে গেলেও পরে তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করান ওই সঙ্গীই।
যদিও ওই সঙ্গীর দাবি খতিয়ে দেখতে তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘তদন্ত চলছে। পুলিশের কাছে নতুন তথ্য এলে তা জানানো হবে।‘ সেই সঙ্গে তিনি জানান, বিষয়টি সংবেদনশীল। তাই সব দিক মাথায় রেখেই তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। সামাজিক মাধ্যমে কোনও রমক গুজব যাতে না ছড়ানো হয় সেই নিয়েও বার্তা দেন তিনি। অপরাধের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হবে। খুব দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান তিনি।
ঘটনার কথা জানতে পেরে শনিবার সকালে ওড়িশা থেকে দুর্গাপুরে আসেন নির্যাতিতার বাবা এবং পরিবারের অন্য সদস্যেরা। নির্যাতিতার বাবা জানান, তাঁর মেয়ে এখানে নিরাপদ নন। সেই সঙ্গে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। নির্যাতিতার বাবা জানিয়েছেন, পুলিশ তাঁকে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে। গণধর্ষণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে স্বাস্থ্যভবন। দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালকে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কাছে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
শুক্রবার দুপুরে দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে যান জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যা অর্চনা মজুমদার। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করে পোস্ট করেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালবীয়।
সেই সঙ্গে শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষোভ উগরে দেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ঘটনা প্রসঙ্গেই শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, বাংলায় পরপর এমন ঘটনায় রাজ্যের সম্মান দেশ-বিদেশে ভূ-লুণ্ঠিত হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর প্রশাসনকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, সবাই অপদার্থ পুলিশ এবং মুখ্যমন্ত্রীকে দেখছেন। এঁরা হচ্ছে আসলে বাংলার লজ্জা।
এদিন বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের নেতৃত্বে দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানা ঘেরাও করা হয়। শুক্রবার বিকেলে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেন আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘আরজি কর হোক বা দুর্গাপুর, ডাক্তারদের ধর্ষণ করা তো প্রবণতায় পরিণত হয়েছে এ রাজ্যে। এখানে যারা ধর্ষণ করে, তারা জানে যে তাদের মাথার উপর তৃণমূল রয়েছে। এ রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই।’
এই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘এখানে রাজনীতির কোনও জায়গা নেই। এটা সামাজিক অবক্ষয়। পুলিশ তদন্ত করছে।‘ বিজেপিশাসিত রাজ্যের মহিলাদের উপর নির্যাতন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই তদন্ত শুরু করেছে। নির্যাতিতা ওড়িশার। তাঁর মা-বাবাও এখানে এসেছেন। তাঁরা রাজ্য সরকারের তদন্তে আস্থা রেখেছেন। বিজেপি এখানে রাজনীতি করছে। মহিলাদের উপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়।’ তিনি আরও সংযোজন, ‘ওড়িশায় বিজেপির সরকার। ওখানেও এক পড়ুয়াকে হেনস্থা করা হয়েছিল। সেই পড়ুয়া পরে গায়ে আগুনও দেয়। এই ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। প্রশ্ন তুলতে চাইলে সর্বত্রই প্রশ্ন তোলা উচিত।’
দোষীদের কঠোর শাস্তি দিতে এবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাজি। এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে ডাক্তারি ছাত্রীর গণধর্ষণের ঘটনার কথা শুনে আমি অত্যন্ত আহত, চিন্তিত। এটা খুবই নিন্দনীয় ঘটনা। এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে দোষীদের কঠোরতম শাস্তির জন্য আমি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানাচ্ছি। যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা তিনি নেবেন বলেই ভরসা রাখছি।’