নন্দীগ্রামে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মার খেল নিরীহ স্কুল পড়ুয়া, ঘটনায় ক্ষুব্ধ দলের জেলা সম্পাদকও
বর্তমান | ১২ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: নাগরাকাটায় দলীয় সাংসদ খগেন মুর্মুর উপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে নন্দীগ্রামে গোষ্ঠীসংঘাতে জড়াল বিজেপি। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে মার খেল এক নিরীহ তফসিলি স্কুলপড়ুয়া। শুক্রবার বিকেলে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের মহেশপুর বাজারে ওই ঘটনায় উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। ঘটনার নিন্দা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল নিজেও এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, দলের মধ্যে গোষ্ঠীবিবাদ আছে এবং থাকবে। তাই বলে একজন নিরীহ নাবালক মার খাবে কেন? এটা ঠিক হয়নি।
শুক্রবার বিকেল ৪টেয় নন্দীগ্রাম-৩ মণ্ডল কমিটির তরফে মহেশপুর বাজারে প্রতিবাদ সভার ডাক দেওয়া হয়েছিল। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরাকাটায় গিয়ে আক্রান্ত হন মালদহ উত্তর লোকসভার সদস্য খগেন মুর্মু। তার প্রতিবাদে ওই সভার ডাক দিয়েছিলেন মণ্ডল সভাপতি বটকৃষ্ণ দাস। কথামতো আমগেছিয়ার নাড়ুগোপাল দাস সভাস্থলে গিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই মাইক বাঁধার কাজ সেরে ফেলেন। শুক্রবার বিকেলে বৃষ্টি হওয়ায় নির্ধারিত কর্মসূচি বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ স্থগিত ঘোষণা করেন বটকৃষ্ণবাবু। সভা স্থগিত ঘোষণা করায় বিকেল ৪টা নাগাদ মাইক খুলে নেওয়া হচ্ছিল। সেই সময় নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির তিন কর্মাধ্যক্ষ সাহেব দাস, স্বদেশ দাসঅধিকারী ও ভিক্টর মণ্ডলের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন কর্মী সভার কাজ শুরু করতে উদ্যোগী হন। মাইক গুটিয়ে নেওয়ায় নাড়ুগোপালবাবুর নাবালক ছেলেকে চড় থাপ্পড় মারে কর্মাধ্যক্ষদের ঘনিষ্ঠ বিজেপির লোকজন। শনিবার মারধর করার ভিডিও পোস্ট করেন নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ। তিনি বলেন, নন্দীগ্রামে বিজেপির গোষ্ঠী রাজনীতির কারণে মার খেল এক তফসিলি নাবালক।
নন্দীগ্রাম-৩ মণ্ডলের মধ্যে পড়ে গোকুলনগর ও সোনাচূড়া গ্রাম পঞ্চায়েত। এই দু’টি পঞ্চায়েত বিজেপির দুর্গ বলে পরিচিত। পাশাপাশি এখানেই বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সবচেয়ে বেশি। সাহেববাবু, স্বদেশবাবুরা মণ্ডল সভাপতি বটকৃষ্ণবাবু বিরোধী গোষ্ঠীর লোক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। মণ্ডল সভাপতি কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণার পরেও সভা করতে যাওয়া এবং মাইক খুলে নেওয়ার জন্য নাবালককে মারধর করায় এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বটকৃষ্ণবাবু বলেন, মণ্ডল সভাপতি হিসেবে আমি বিকেল সাড়ে ৩টেয় কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করি। তারপর যাঁরা সভা করলেন তাঁদের উদ্দেশ্য দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব খতিয়ে দেখবে। সভা বাতিল করার পরও পুলিশ প্রশাসন কীভাবে সেটা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিল? আসলে দলের বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে শাসক দল ও পুলিশ প্রশাসনের আঁতাত রয়েছে। দলের পদাধিকারীদের পার্টির গাইডলাইন মানা উচিত। মণ্ডল সভাপতিকে বাদ দিয়ে কোনও কর্মসূচি করা যায় না। যাঁরা করেছেন, তাঁরা দলের শৃঙ্খলা মানেন না। বিজেপি নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ স্বদেশবাবু বলেন, শুক্রবার দলের প্রতিবাদ সভা চলার সময় আশপাশেই ছিলেন মণ্ডল সভাপতি বটকৃষ্ণবাবু। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে তাঁকে কথা বলতে দেখা যায়। তখন তিনি সভা নিয়ে কোনও আপত্তি করেননি। শনিবার সংবাদ মাধ্যমের কাছে উল্টো কথা বলছেন। নিজেকে বিপ্লবী ভাবছেন।