ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে, আমরা গর্বিত, হরিহরপাড়ায় শহিদের শেষযাত্রায় বললেন বাবা
বর্তমান | ১২ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: বাড়িতে ৪৫ দিনের ছুটি কাটিয়ে পুজোর আগেই স্পেশাল অপারেশনের জন্য কাশ্মীরে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। আজ, শনিবার হরিহরপাড়ার বাড়িতে ফিরল সেই বীর সেনাকর্মী পলাশ ঘোষের নিথর দেহ। কাশ্মীরে শহিদ হওয়া হরিহরপাড়ার বীর সন্তানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকেই অপেক্ষা করছিল রুকুনপুর গ্রামের বলরামপাড়া। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন এসে অপেক্ষা করতে থাকেন বলরামপাড়ার রাস্তায়।
‘ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে, আমরা গর্বিত’। বাড়ির সামনে উঠোনে দাঁড়িয়ে চোখের জল লুকিয়ে বলছিলেন পলাশ ঘোষের বাবা প্রশান্ত ঘোষ। কিন্তু, মায়ের মন কিছুতেই মানছে না। ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে বারান্দায় বসে সকাল থেকেই কেঁদে চলেছেন। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শহিদের স্ত্রী। বাড়িতে আট ও চার বছরের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। কান্নাকাটি দেখে তারাও ভাবলেশহীন। তারা বুঝতেও পারছে না যে, তাদের বাবা আর কোনওদিন ফিরবে না। বিবাহবার্ষিকীতে এসে সপরিবারে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল পলাশের। কিন্তু, দেশরক্ষার কাজ করতে গিয়ে সেই কথা আর রাখতে পারলেন না স্বামী। বিড়বিড় করে একথাই বলে চলেছেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন শহিদের স্ত্রী।
শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় নিখোঁজ সেনাকর্মী পলাশ ঘোষের দেহ মিলেছে। সেই খবর গ্রামে পৌঁছতেই তাঁর পরিবার-পরিজনরা শোকে পাথর হয়ে যান। চলতি সপ্তাহের প্রথম থেকেই পলাশ নিখোঁজ ছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতীয় সেনার এলিট প্যারা ইউনিটের দুই সেনা মঙ্গলবার কোকেরাংয়ে একটি অভিযান চলাকালীন নিখোঁজ হন। আহলান গাডোল এলাকায় ওই অভিযান চলছিল। ভারতীয় সেনার কাছে খবর ছিল, ওই এলাকায় জঙ্গিরা লুকিয়ে রয়েছে। ৬-৭ অক্টোবর পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সেই জঙ্গিদের দমন অভিযানে পলাশ শামিল হয়েছিলেন। সেই সময় তুষার ধসে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। গত বৃহস্পতিবার উদ্ধার হয়েছিল সেনাকর্মী বীরভূমের সুজয় ঘোষের দেহ। শুক্রবার পলাশ ঘোষের দেহ উদ্ধার হয়। দেহের সঙ্গেই উদ্ধার হয়েছে তাঁর বন্দুক। পলাশের মা আদুরী ঘোষ কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ছেলে কয়েকদিন ফোন করেনি। ওর সঙ্গে যারা থাকত, তারা ফোনে বলেছিল, ‘পলাশের ফোন হারিয়ে গিয়েছে। চিন্তা করবেন না।’ পরে সবার মুখে শুনছি, ছেলে দেশের হয়ে অপারেশন করতে গিয়েছিল। সেখানে ধসে চাপা পড়ে মারা গিয়েছে। • শহিদ জওয়ান পলাশ ঘোষ।