• রাজনগর ও হরিহরপাড়ায় ফিরল দুই শহিদ জওয়ানের কফিনবন্দি মৃতদেহ
    বর্তমান | ১২ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রাজনগর ও বহরমপুর: একজন ছুটি কাটিয়ে দুর্গাপুজোর আগেই গিয়েছিলেন কাশ্মীরে, অন্যজনের সেখান থেকে বাড়ি ফেরার কথা ছিল কালীপুজোর আগে। কিন্তু শনিবার দু’জনেই শেষবারের মতো ভিটেতে ফিরলেন বটে, তবে জাতীয় পতাকায় মোড়া কফিনে। একজন মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার পলাশ ঘোষ ও অন্যজন বীরভূমের রাজনগরের কুণ্ডিরা গ্রামের সুজয় ঘোষ। কাশ্মীরে নিহত দুই সেনা জওয়ান। শনিবার দুই শহিদের দেহ যখন গ্রামে ফিরল, তখন চারপাশে তিল ধারণের জায়গা নেই। থেকে থেকেই উঠছে কান্নার রোল। পরিজনদের পাশাপাশি তাঁদের শেষ শ্রদ্ধা জানান আট থেকে আশি, সকলেই। ভারত মায়ের জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা।

    মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডেলে শোক প্রকাশ করে বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের সময় চরম প্রতিকূল আবহাওয়া ও তুষারধসে আমাদের বাংলার দুই সাহসী প্যারা-কমান্ডোর শহিদ হওয়ার ঘটনায় আমি শোকাহত। বীরভূমের ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষ এবং মুর্শিদাবাদের ল্যান্স হাবিলদার পলাশ ঘোষকে দেশরক্ষায় তাঁদের অসীম বীরত্ব, নিষ্ঠা এবং আত্মত্যাগের জন্য আমার স্যালুট জানাই। তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবার ও আত্মীয়দের সমবেদনা জানাচ্ছি। এই শোকের সময়ে আমাদের সরকার দুই পরিবারকেই সম্ভাব্য সব সহায়তা করবে।

    ৪৫ দিনের ছুটি কাটিয়ে পুজোর আগেই স্পেশাল অপারেশনের জন্য কাশ্মীরে গিয়েছিলেন হরিহরপাড়ার সেনা জওয়ান পলাশ ঘোষ। আর আগামী ১৪ অক্টোবর কালীপুজোর আগেই ছুটিতে বাড়ি আসার কথা ছিল রাজনগরের সুজয় ঘোষের। শনিবার বিকেলে যখন কুণ্ডিরা গ্রামে এসে পৌঁছল শহিদ সুজয় ঘোষের কফিনবন্দি দেহ, তখন চারপাশে কাতারে কাতারে মানুষ। গ্রামের খেলার মাঠে নিহত জওয়ানকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। সেনার পদস্থ কর্তারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ, বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, বিধায়ক অনুপ সাহা, বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা।

    চলতি সপ্তাহেই দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগে জঙ্গি দমন অভিযান চলাকালীন হঠাৎ তুষারঝড় শুরু হওয়ায় নিখোঁজ হয়ে যান দুই বাঙালি প্যারা কমান্ডো পলাশ ঘোষ ও ল্যান্সনায়েক সুজয় ঘোষ। দু’জনেই দক্ষ এলিট শ্রেণির প্যারাট্রুপার। শুক্রবার দুই জওয়ানের বাড়িতেই তাঁদের মৃত্যুর খবর আসে। সুজয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই কেঁদে চলেছেন দাদা মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ।

    ‘ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে, আমরা গর্বিত’। হরিহরপাড়ার রুকুনপুর গ্রামের বলরামপাড়ায় বাড়ির সামনে উঠোনে দাঁড়িয়ে চোখের জল লুকিয়ে বলছিলেন পলাশ ঘোষের বাবা প্রশান্ত ঘোষ। কিন্তু, মায়ের মন কিছুতেই মানছে না। ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে বারান্দায় বসে সকাল থেকেই কেঁদে চলেছেন। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শহিদের স্ত্রী। বাড়িতে আট ও চার বছরের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)