দুর্যোগে নদীর চরে নষ্ট হওয়া ফসলেরও ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য
বর্তমান | ১২ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘একজন ব্যক্তিও যেন ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয়।’ প্রতিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের এ বিষয়ে সতর্ক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। উত্তরবঙ্গের সাম্প্রতিক বিপর্যয়েও তার কোনও ব্যতিক্রম হয়নি। সেই মতো দ্রুত পদক্ষেপ করছে নবান্ন। এবার কৃষিক্ষেত্রের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। বিভিন্ন নদীর চরে ফসল ফলান রাজ্যের বহু মানুষ। তাঁরা এতদিন কোনও ক্ষতিপূরণ পেতেন না। এই ভয়াবহ বিপর্যয়ে উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন নদীর চরে যাঁদের ফসল নষ্ট হয়েছে, এই প্রথম তাঁদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় নিযুক্ত কৃষি আধিকারিকদের সঙ্গে শনিবার ভার্চুয়াল বৈঠক করেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, কৃষিসচিব ওঙ্কার সিং মিনা সহ দপ্তরের পদস্থ কর্তারা। ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী তথা কৃষি বিশেষজ্ঞ প্রদীপ মজুমদার। উত্তরবঙ্গে চাষের ক্ষয়ক্ষতি এবং এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের কী পদক্ষেপ করা উচিত, তা চূড়ান্ত করতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই উত্তরবঙ্গে গিয়েছেন প্রদীপবাবু। একগুচ্ছ নির্দেশিকার পাশাপাশি এদিনের বৈঠকেই নদীর চরে চাষ করে যাঁরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। নদীর চরের জমির কোনও ব্যক্তি মালিকানা হয় না। তবে এ রাজ্যে বিভিন্ন নদীর চরে চাষবাস হয়ে আসছে বহুদিন ধরে।
এদিন দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠক হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিএলআরওদের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই নদীর চরের ফসল নষ্ট বাবদ ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য। ফসল নষ্ট হলে এ রাজ্যে ‘বাংলা শস্য বিমা’ প্রকল্পের অধীনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। কিন্তু নদীর চরের জমির কোনও ব্যক্তিগত মালিকানা হয় না বলে এই বিমার সুবিধাও মেলে না। তাই বিএলআরওদের রিপোর্টের ভিত্তিতে আলাদা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে নবান্ন। তবে কতজন কৃষক এই ক্ষতিপূরণ পাবেন সেই সমীক্ষা এখনও চলছে। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এই পদক্ষেপ করছে কৃষিদপ্তর। একজনও যাতে ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হন, সেটাই আজকের ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রত্যেক আধিকারিককে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাংলা শস্য বিমায় নাম তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ এখনও পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে বাংলা শস্য বিমায় ৪২ লক্ষ কৃষক নাম লিখিয়েছেন বলেই সূত্রের খবর। আরও জানা গিয়েছে, এই দুর্যোগে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন দুর্গত এলাকার মাটির কোনও পরিবর্তন ঘটেছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে শনিবার বিধানচন্দর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষজ্ঞরা সেখানে গিয়েছেন। ঠিক হয়েছে, মোট ১ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা খরচে ২৫ কুইন্টাল সর্ষের বীজ, ২০০ কুইন্টাল ডালশস্য ও ৬০০ কুইন্টাল ভুট্টার বীজ তুলে দেওয়া হবে উত্তরবঙ্গের কৃষকদের।