লাগাতার যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন আরএসএস সদস্যরা! আত্মহত্যার আগে কাঠগড়ায় তুলে বড় সত্যি জানিয়ে গেলেন কেরলের যুবক
আজকাল | ১২ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কেরলের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী আনন্দু আজি। কোট্টায়ামের থামাপালাক্কাড়ের। বয়স মাত্র ২৬। তিরুঅনন্তপুরমের একটি লজ থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছে বৃহস্পতিবারে। ওই যুবকের মৃত্যুর পর, তাঁরই একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট নিয়ে জোর চর্চা। যদিও অনেকেই মনে করেছেন, মৃত্যুর কারণ সকলের সামনে স্পষ্ট করতে, আত্মহত্যার মতো চূড়ান্ত পথ বেছে নেওয়ার আগে, তিনি নিজেই এই পোস্টটি শিডিউল করে রেখেছিলেন। যেখানে আনন্দু জানিয়েছেন, তাঁর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। আর সেই তথ্য সামনে আসতেই জলঘোলা, জোর চর্চা রাজনৈতিক মহলেও।
কারণ? কারণ, জীবন শেষ করে দেওয়ার মতো চরম পদক্ষেপ নেওয়ার পিছনের কারণ হিসেবে ওই যুবক প্রেম, সাংসারিক কিংবা আর্থিক কোনও সমস্যাকে কাঠগড়ায় তোলেননি। সরাসরি কাঠগড়ায় তুলেছেন আরএসএসকে। ওই যুবক তাঁর পোস্টে সাফ লিখেছেন, 'আমার কারও উপর রাগ নেই, শুধু একজন ব্যক্তি এবং একটি সংগঠন ছাড়া। সংগঠনটি হল আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ), যেখানে আমার বাবা (একজন খুব ভাল ব্যক্তি) আমাকে যুক্ত করিয়েছিলেন। সেখানেই আমি সারাজীবন মানসিক আঘাত পেয়েছি, সংগঠন এবং সেই ব্যক্তির কাছ থেকে।'
তিনি বিস্তারিত জানিয়েছেন নির্যাতন প্রসঙ্গেও। সমাজমাধ্যমের ওই পোস্টে লিখেছেন, 'আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমি এক লাগাতার এক ব্যক্তির যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম। আরএসএসের বেশ কয়েকজন সদস্যের দ্বারাও আমি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমি জানি না তাঁরা কারা ছিলেন। তবে আমি সেই ব্যক্তির মুখোশ উন্মোচন করব যে আমার বয়স যখন মাত্র ৩-৪ বছর ছিল তখন আমাকে নির্যাতন করেছিল।' ওই ব্যক্তি প্রসঙ্গে তাঁর সংক্ষিপ্ত নাম তিনি উল্লেখ করেছেন পোস্টে।
আনন্দু জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি আরএসএস এবং বিজেপির সক্রিয় সদস্য ছিলেন, তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন এবং ছোট থেকে যাঁকে নিজের বড় দাদার মতো ভাবতেন তিনি। ছোট বয়সেই লাগাতার নির্যাতন, মানসিক ক্ষত তৈরি করে, যার কারণে পরবর্তী জীবনে তিনি অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) রোগে আক্রান্ত হন বলেও জানান পোস্টে।
আরএসএস প্রসঙ্গে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে চেয়েছেন তিনি পোস্টে। লিখেছেন, 'অন্য কোনও সংগঠন নেই যা আমি একেবারেই ঘৃণা করি। আমি এটা ভাল করেই জানি কারণ আমি এত বছর ধরে তাদের সঙ্গে কাজ করেছি। কখনও কোনও আরএসএস সদস্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব করো না। শুধু বন্ধুই নয়, এমনকী যদি সে তোমার পরিবার, তোমার বাবা, ভাই বা ছেলেও হয়, তাঁদের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দাও। তাঁরা আদতে বিষ বহন করেন। তারাই আসল নির্যাতনকারী।' তিনি এও জানিয়েছেন, শুধু তাঁকেই নয়, নানা সময়ে আরও বহু শিশুর উপর অত্যাচার চালিয়েছেন আরএসএস সদস্যরা। তিনি দলের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নেওয়ায় তা জানাতে পেরেছেন বলেও পোস্টে উল্লেখ করেন।
বাবা-মায়েদের উদ্দেশে বলেন, 'পৃথিবীর কোনও শিশু যেন আমার মতো কষ্ট না পায়। বাবা-মায়ের এটা নিশ্চিত করা উচিত। নির্যাতনের পর শিশুরা মুখ খুলতে নাও পারে, কারণ তারা ভয় পাবে। বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের সঙ্গে একটা সংযোগ তৈরি করা, যাতে তারা আপনার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতে পারে।'