• নতুন প্রজন্মের ‘অদৃশ্য যুদ্ধবিমান’ আসছে ভারতে, এবার কী করবে প্রতিবেশী দেশ...
    আজকাল | ১২ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:  ভারতীয় বায়ুসেনা রাশিয়ার পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান সু-৫৭ই (Su-57E) কেনার বিষয়ে গুরুত্বসহকারে ভাবছে। এটি ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। পাকিস্তান যখন চীনের জে-৩৫এ (J-35A) স্টেলথ জেট কেনার পরিকল্পনা করছে এবং ভারতের নিজস্ব অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট এখনও বাস্তবায়নের বহু বছর দূরে, তখন এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

    বর্তমানে IAF-এর হাতে মাত্র ৩১টি ফাইটার স্কোয়াড্রন রয়েছে, যেখানে অনুমোদিত সংখ্যা ৪২টি স্কোয়াড্রন। অর্থাৎ প্রায় ২০০টি যুদ্ধবিমানের ঘাটতি রয়েছে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক বড় উদ্বেগের বিষয়। প্রস্তাবিত ৪০–৬০টি সু-৫৭ই ক্রয় করলে এই ঘাটতি অনেক দ্রুত পূরণ হতে পারে নিজস্ব প্রকল্প বা দীর্ঘমেয়াদি ক্রয়প্রক্রিয়ার অপেক্ষা ছাড়াই।

    সু-৫৭ই, ন্যাটো কোডনেম “ফেলন”, রাফালের তুলনায় একেবারে ভিন্ন ক্ষমতার প্রতীক। রাফাল যেখানে ৪.৫ প্রজন্মের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিরোল ফাইটার, সেখানে সু-৫৭ই মূলত একটি স্টেলথ যুদ্ধবিমান—যার রাডার-এভেডিং প্রযুক্তি একে শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চোখে প্রায় অদৃশ্য করে তোলে।

    চীন ইতিমধ্যেই প্রচুর জে-২০ স্টেলথ ফাইটার মোতায়েন করেছে এবং পাকিস্তানও শিগগির জে-৩৫এ পেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের হাতে যদি স্টেলথ ক্ষমতাসম্পন্ন বিমান না থাকে, ভবিষ্যতের সংঘাতে এটি একটি বড় দুর্বলতা হয়ে দাঁড়াবে।

    সু-৫৭ই এমন একটি যুদ্ধবিমান যা আফটারবার্নার ছাড়াই সুপারসনিক গতিতে উড়তে পারে—যাকে সুপারক্রুজ  বলা হয়। এতে জ্বালানি কম খরচ হয় এবং যুদ্ধ পরিসর বাড়ে। এর নকশা উচ্চপর্যায়ের অভিযানের জন্য আদর্শ, বিশেষত হিমালয়ের ওপর যেখানে ভারতের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা চ্যালেঞ্জ।

    এই জেট হাইপারসনিক অস্ত্র, যেমন কিনঝাল মিসাইল বহন করতে পারে—যা ভারতের আক্রমণক্ষমতা বহুগুণে বাড়াবে। আরও উল্লেখযোগ্য হল, এটি একটি “ড্রোন মাদারশিপ” হিসেবে কাজ করতে পারে, অর্থাৎ S-70 ওখোটনিক-বি ড্রোনের মতো মানহীন বিমানের সাথে যৌথ মিশন পরিচালনা করতে পারে। এটি ভবিষ্যতের এয়ার ওয়ারফেয়ারের দিক নির্দেশ করছে।

    পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম ব্যাচের বিমান সরাসরি রাশিয়া থেকে কেনা হবে এবং ২০২৮ সাল নাগাদ সরবরাহ শুরু হবে। প্রতিটি বিমানের দাম প্রায় ৮০–১০০ মিলিয়ন ডলার (৭,০৪০–৮,৮০০ কোটি), অর্থাৎ মোট প্রকল্পের ব্যয় হবে ২৮,০০০–৫৩,০০০ কোটি। তুলনামূলকভাবে এটি যুক্তিসঙ্গত বিনিয়োগ, কারণ এতে ভারত দ্রুত আধুনিক ফাইটার সংগ্রহ করতে পারবে, স্থানীয় উৎপাদন অবকাঠামো তৈরি না করেও। এই প্রকল্পে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। যেমন HAL আগে রাশিয়ার সু-৩০-কে ভারতীয় সংস্করণ সু-৩০এমকেআই “সুপার-৩০” তে রূপান্তরিত করেছিল, তেমনি এবার “সুপার ফেলন” আপগ্রেড প্রকল্পে ভারতীয় প্রযুক্তি সংযোজনের পরিকল্পনা রয়েছে।

    HAL নাসিক ইউনিটে ভারতীয় অস্ত্র, উত্তম AESA রাডার, স্বদেশি মিশন কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম সংযোজনের কাজ করবে। ১০০টির বেশি বিমান অর্ডার দিলে রাশিয়া সম্পূর্ণ প্রযুক্তি হস্তান্তর দেবে বলেও প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্প শুধু ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়াবে না, বরং HAL-কে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রযুক্তিতে অভিজ্ঞ করে তুলবে যা ভবিষ্যতের AMCA প্রকল্পের ভিত্তি মজবুত করবে।
  • Link to this news (আজকাল)