গোরুমারায় চালু হাতি সাফারি, অনলাইন বুকিংয়েই মিলছে রাইডের সুযোগ, চাহিদা তুঙ্গে, জলদাপাড়াতেও শুরু হবে শীঘ্রই
বর্তমান | ১২ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলে আগেই শুরু হয়েছে কার সাফারি। এবার হাতি সাফারিও চালু হয়ে গেল গোরুমারায়। তবে আপাতত যেসব পর্যটক অনলাইনে বুকিং করছেন, তাঁরাই হাতি সাফারির সুযোগ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন গোরুমারার ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন। জলদাপাড়ায় জঙ্গলের ভিতরে কিছু রাস্তা ও নদী-ঝোরার উপর কাঠের সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলি মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত ওই কাজ সেরে জলদাপাড়াতেও শীঘ্রই হাতি সাফারি চালুর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) ভাস্কর জেভি। আজ, রবিবার ফের উত্তরবঙ্গে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসিমারায় নেমে তাঁর মালঙ্গিতে যাওয়ার কথা। সেখানে সাম্প্রতিক বন্যার জেরে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে রিভিউ বৈঠক করতে পারেন তিনি। বনদফতর সূত্রে খবর, বিপর্যয়ে জঙ্গলের কোথায়, কী ক্ষতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে এখন স্ক্যানিং চলছে। শুধুমাত্র গোরুমারাতেই প্রায় ২০টি হাতিকে ওই কাজে লাগানো হয়েছে। ফলে সাফারির জন্য হাতির টান পড়েছে। এই মুহূর্তে ধূপঝোরা এলিফ্যান্ট ক্যাম্প থেকে পর্যটকদের জঙ্গল ঘোরাতে রাখা হয়েছে দু’টি কুনকি, জেনি ও মাধুরিকে। জলদাপাড়ায় যেহেতু হাতি সাফারি হচ্ছে না, ফলে গোরুমারায় এলিফ্যান্ট রাইডের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু হাতির সংখ্যা কম থাকায় দিনে ১২ জনের বেশি পর্যটক গোরুমারায় এলিফ্যান্ট রাইডের সুযোগ পাচ্ছেন না। দু’টি হাতি সকালে দু’বার এবং বিকেলে একবার রাইড করাচ্ছে। প্রতি ট্রিপে একটি কুনকির পিঠে দু’জন করে পর্যটক জঙ্গলে ঘুরতে পারছেন। ফলে বহু পর্যটক হাতি সাফারির সুযোগ পাচ্ছেন না। তাঁরা অফলাইনে এলিফ্যান্ট সাফারি বুকিংয়ের জন্য প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন গোরুমারার ধূপঝোরা এলিফ্যান্ট ক্যাম্পে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অফলাইনে হাতি সাফারির বুকিং হচ্ছে না। এদিকে, সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে গোরুমারা জঙ্গলে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি না হলেও জিরো বাঁধের কাছে ভেঙে পড়েছে নজরমিনার। ওই ওয়াচ টাওয়ার থেকে বনকর্মীরা জঙ্গল পাহারা দিতেন। জলের তোড়ে সেটি ভেঙে যাওয়ায় কিছুটা হলেও জঙ্গল পাহারায় সমস্যা হচ্ছে বনদফতরের। এদিকে, হাতি-গণ্ডারের পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করতে এবার বর্ষার মরশুমে বনদফতর গোরুমারা, জলদাপাড়া, বক্সা সহ উত্তরের জঙ্গলে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে ঘাস রোপণ করেছিল। বন্যায় তিনশো হেক্টরের বেশি ঘাসজমি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাকি ঘাস-জমিতেও ভুটান পাহাড় থেকে জলের সঙ্গে নেমে আসা ডলোমাইট মিশেছে। ফলে ওই ঘাস হাতি-গণ্ডার সহ তৃণভোজী প্রাণীরা আর খাবে না। সেক্ষেত্রে খাবারের টানে বন্যপ্রাণীদের লোকালয়ে বেরিয়ে আসার ঘটনা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বনকর্তারা। এক্ষেত্রে বন্যপ্রাণীর সঙ্গে সংঘাত বাড়তে পারে মানুষের। সেই সংঘাত ঠেকানোই এখন মূল লক্ষ্য বনদফতরের।গোরুমারার ডিএফও বলেন, বন্যার জেরে জঙ্গল থেকে লোকালয়ে বন্যপ্রাণ বেরিয়ে আসার ঘটনা অনেকটাই বেড়েছে। এখনও পর্যন্ত আমরা গোরুমারা ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশনের ১১টি জায়গা থেকে হাতির দলকে জঙ্গলে ফেরত পাঠিয়েছি। তিনটি জায়গা থেকে জঙ্গলে ফেরত পাঠানো হয়েছে গণ্ডারের দলকে। চারটি জায়গা থেকে জঙ্গলে ঢোকানো হয়েছে বাইসনের দলকে। তাঁর দাবি, গোরুমারা ও জলপাইগুড়ি ডিভিশন মিলিয়ে প্রায় দেড়শো বনকর্মীকে মোতায়েন রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ৩০ জন সশস্ত্র বনরক্ষী রয়েছেন। বন্যপ্রাণী বেরনোর খবর পাওয়ামাত্র তাঁরা যাতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছতে পারেন, সেজন্য বিভিন্ন স্পটে মোতায়েন রাখা হয়েছে ২৪টি গাড়ি। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) ভাস্কর জেভি বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় দু’টি গণ্ডার সহ নদীতে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে আটটি বাইসনের। জলের তোড়ে ভেসে যাওয়ায় মারা গিয়েছে ১৪টি হরিণের। মেচি নদী থেকে উদ্ধার হওয়া ১৫ দিনের হস্তিশাবককে হলং পিলখানায় নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা ও পরিচর্যা চলছে।