সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: পাড়ার পর এবার আদ্রা। প্রায় একই ঢংয়ে এলাকার অবসরপ্রাপ্ত এক রেল কর্মচারী শিকার হলেন প্রতারণার। একই কায়দায় রেল আধিকারিক পরিচয় দিয়ে আদ্রার অবসরপ্রাপ্ত ওই রেল কর্মচারীকে পেনশন সংক্রান্ত কাগজের বিষয় নিয়ে ফোন করা হয়। ফোনের মাধ্যমে কথার ছলে যাবতীয় তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়। ওই তথ্য হাতে পাওয়ার পরেই প্রতারকরা ওই অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীর অ্যাকাউন্ট থেকে এক ধাপে ১ লক্ষ ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। এরপরই ওই ব্যক্তি প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ও অ্যাকাউন্টটি ফ্রিজ করিয়ে দেন। ফলে অবসরপ্রাপ্ত ওই রেল কর্মচারী বড়সড় টাকার প্রতারণা থেকে রক্ষা পেয়েছেন। প্রতারকদের হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরত পেতে তাই আদ্রা থানায় অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ওই অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মচারী। পাশাপাশি প্রতারকদের ফোন নম্বর, তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়গুলি পুলিশের হাতে তুলে দেন। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক শোরগোল ছড়িয়েছে।
পুলিশের এক সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, গত ৬ অক্টোবর ওই রেল কর্মচারীর কাছে একটি ফোন আসে। ফোনে এক ব্যক্তি নিজেকে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের এক আধিকারিক পরিচয় দেন। সেইসঙ্গে ওই রেল কর্মচারীর পেনশন সংক্রান্ত কাগজপত্র আটকে থাকার বিষয়ে কথা বলেন। বিশ্বাস অর্জনের জন্য ওই ব্যক্তিকে বিকেল ৫টার পর আদ্রা অফিসে দেখা করতে বলেন। আর দ্রুত পেনশন চালুর ব্যাপারে আশ্বাস দিয়ে ওই ব্যক্তির থেকে জরুরি কিছু তথ্য চায় প্রতারক। তাতেই ওই অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মচারীর মন গলে যায়। তিনি প্রতারকদের পাতা ফাঁদে পা দেন। নিজের অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্য দিয়ে দেন। আর তাতেই লক্ষাধিক টাকা গায়েব হয়ে যায়।
অভিযোগকারী বলেন, অফিসের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে ফোন করেছিল। পেনশন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলেছিল। তারপর স্মার্ট ফোন আছে কি না তা জিজ্ঞাসা করে। ফোন থাকার বিষয় জানাতেই ভিডিও কল করেন আমাকে। কিছু তথ্য নেওয়ার পর এটিএমের একটি স্টেটমেন্ট লাগবে বলেও জানান। তাই এটিএম কাউন্টারে যাই। সেখানে প্রতারক ভিডিও কল করে আমার পিন নম্বর, এটিএম নম্বর সব নিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ বাদেই অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লক্ষ ৭ হাজার টাকা কেটে নেওয়ার মেসেজ পাই। প্রতারণার শিকার হয়েছি বুঝে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সঙ্গে সঙ্গে আমার অ্যাকাউন্ট নম্বর, এটিএম সব বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সাইবার বিশেষজ্ঞ এক পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বর্তমানে সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে মোবাইল নম্বর অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। তাই প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে নতুন সংযোগ হয়েছে স্মার্টফোন। সেক্ষেত্রে অনেকেই স্মার্টফোন পরিচালনা করতে না পারলেও কাজের গুরুত্বের জন্য নিয়ে নিচ্ছেন। সাইবার প্রতারকরা এসব ব্যক্তিদেরই টার্গেট করে নিচ্ছে। আর সেই সব ব্যক্তিরাও কিছু না বুঝেই প্রতারকদের কথার ছলে ফেঁসে যাচ্ছেন। যার ফলস্বরুপ শেষ পরিণতি ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জীবনের কষ্টার্জিত অর্থ নিমেষে অ্যাকাউন্ট থেকে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সাইবার বিশেষজ্ঞরা তদন্ত শুরু করেছেন।