• দু-তিনদিনেই চূড়ান্ত আসনরফা, ছটের পর প্রচারে ঝড়, বিহারে নীতীশ বিদায়ের অঙ্ক কষছে কংগ্রেস
    প্রতিদিন | ১২ অক্টোবর ২০২৫
  • সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: জটিলতা অনেক। তবে আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই বিহারের আসনরফা নিয়ে যাবতীয় জট কাটিয়ে ফেলার ব্যাপারে আশাবাদী কংগ্রেস হাই কম্যান্ড। আসনরফা চূড়ান্ত হওয়ার পর সে রাজ্যে প্রচারে ঝড় তুলতে চলেছে কংগ্রেস-সহ ইন্ডিয়া জোট। কংগ্রেস নেতৃত্বের আশা, এবার বিহারে পরিবর্তন আসবে। নীতীশ কুমারকে মানুষ আর মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চাইছে না। আর বিজেপির হাতে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ নেই।

    বিহারের ভোট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। প্রথম দফার মনোনয়ন পর্ব শুরুও হয়ে গিয়েছে। এখনও আসন রফার জট খুলতে পারেনি ইন্ডিয়া জোট। যা নিয়ে কটাক্ষও ছুড়ছে বিরোধীরা। এবারের আসনরফায় জটিলতার অন্যতম কারণ জোটে নতুন শরিকদের আগমন এবং বামেদের বাড়তি আসন দাবি। এবার ইন্ডিয়া জোটে যোগ দিয়েছে মুকেশ সাহানির ভিআইপি, এবং জেএমএমের মতো দল। তাছাড়া এবার বামেরাও বেশি আসন দাবি করছে তেজস্বীর কাছে। বাম নেতৃত্বের দাবি গতবার ২৯টি আসনে লড়াই করে ১৬টি আসনে জয়ী হয় তারা। অর্থাৎ স্ট্রাইক রেটে সকলের থেকে এগিয়ে। গতবারের ২৯-এর বদলে এবার ৪০টি আসন দাবি করেছে বামেরা। সব সামাল দিয়ে রফা এখনও শেষ হয়নি।

    তবে কংগ্রেস নেতৃত্ব আশাবাদী, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে। এবার আসনরফায় সরাসরি হস্তক্ষেপ শুরু করেছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। অসুস্থতা নিয়েও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে নিয়মিত সব শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। রবিবার দিল্লিতে আসছেন তেজস্বী যাদব-সহ আরজেডির শীর্ষ নেতৃত্ব। সোমবার একটি মামলার শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। এমনিতে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আরজেডি নেতাদের বৈঠকের কোনও কথা নেই। তবে দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যখন দিল্লিতেই থাকছে, তখন বৈঠক হতেই পারে। প্রাথমিকভাবে যা আরজেডি ঠিক করেছে সেটা হল, তারা নিজেরা লড়বে ১৩০-১৩৫ আসনে। কংগ্রেস ৫৮ আসনে। বামেদের ছাড়া হবে ২৫-২৬ আসন। ভিআইপি ১৫-১৬ আসনে লড়তে পারে। বাকি আসন ভাগ হবে পশুপতি পারস এবং জেএমএমের মধ্যে।

    আসন সমঝোতা ছাড়া আরও একটা বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে ইন্ডিয়া জোটের অন্দরে। সেটা হল, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা। আরজেডি চাইছে তেজস্বীকে সকলে মিলে মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করা হোক। কিন্তু কংগ্রেস বলছে, তারা কোনও রাজ্যেই এভাবে আগেভাগে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসাবে কারও নাম ঘোষণা করে নির্বাচনে যায় না। তাছাড়া বিহারে আরজেডিই বৃহত্তম দল। তাদের নেতা তেজস্বী যাদব মুখ্যমন্ত্রী হবেন, সেটা স্বাভাবিক। আরজেডি যদি তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করতে চায়, তাহলে দলের তাতে আপত্তি থাকবে না। তবে কংগ্রেসের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে কারও নাম ঘোষণা করা হবে না। অনেকটা ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো অবস্থান। এ প্রসঙ্গে জয়রাম রমেশ বলছেন, “ইন্ডিয়া জোটের দিকে না তাকিয়ে বিজেপি নিজেদের দিকে দেখুক। নীতীশ কুমার ভোটের পর মুখ্যমন্ত্রী হবেন তো? হলেও তিনি থাকবেন তো?”

    কংগ্রেস সূত্র বলছে, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে সবটা চূড়ান্ত হবে। তারপরই প্রচার। এমনিতে কালীপুজো ছটের জন্য ২১-২৮ তারিখের মধ্যে সেভাবে রাজনৈতিক কার্যকলাপ করা যাবে না। তাই যা করার করতে হবে দিওয়ালির আগে বা ছটের পরে। ইন্ডিয়া জোট চাইছে দিওয়ালির আগে আসন রফা এবং মুখ্যমন্ত্রীর মুখ নিয়ে জটিলতা মিটিয়ে ফেলতে। ছটের পরই জোরকদমে প্রচার শুরু হবে। রাহুল গান্ধী সভা করবেন। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সভা করবেন। তেজস্বীর সঙ্গে যৌথ সভাও হবে। কংগ্রেসের আশা, মুসলিম-যাদবদের পাশাপাশি এবার দলিত, ইবিসিদের একটা বড় অংশও মহাজোটকে সমর্থন করবে। তাছাড়া প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রচারে মহিলারাও আকৃষ্ট হতে পারে মহাজোটের দিকে। কংগ্রেসের আশা, নীতীশ কুমারের ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা থাকাই তাঁর সমর্থকদের একটা বড় অংশের ভোট এবার পড়তে পারে কংগ্রেস তথা মহাজোটের খাতায়।
  • Link to this news (প্রতিদিন)