বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: হড়পা বানে ভেসেছে বইখাতা, সার্টিফিকেট আরও অনেক কিছু। খাবার ও মাথাগোঁজার খোঁজের পাশাপাশি ছেলেমেয়েরা কেমন করে লেখাপড়া চালিয়ে যাবে। চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করবে চিন্তার অন্ত ছিল না বানভাসি অভিভাবকদের। মুশকিল আসানে হাত বাড়ালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে শনিবার ময়নাগুড়ির বানভাসি এলাকায় ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়া পরিবারের খুদে সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয় খাতা, বই, পেন সহ শিক্ষাসামগ্রী।
সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার ফলে নষ্ট হয়ে যাওয়া নথি তৈরির জন্য বিশেষ ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উচ্চ শিক্ষা পর্ষদ বন্যা ও ভূমিধস কবলিত এলাকার যে ছাত্রছাত্রীদের সার্টিফিকেট, মার্কসিট-সহ বিভিন্ন নথি হারিয়েছে তাদের ডুব্লিকেট কপি দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এদিকে দার্জিলিং পাহাড়ে সিওক গুদামধোরা গ্রাম হড়পা বান ও ভূমিধসে নিশ্চিহ্ন হওয়ায় বসতি অন্যত্র স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জিটিএ প্রধান অনীত থাপা। শনিবার তিনি এলাকায় পৌঁছে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান। ওই পরিস্থিতিতে আজ, রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বন্যা কবলিত আলিপুরদুয়ার জেলা সফরের কথা।
শনিবার বানভাসি এলাকার পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। জোরকদমে চলছে সড়ক মেরামত এবং সেতু নির্মাণের কাজ। মাদারিহাট থেকে হলং পর্যন্ত রাস্তা এবং সেতুগুলি মেরামত করা হচ্ছে। সাফারি যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তা থেকে পলি অপসারণের কাজ চলছে। মাদারিহাট সাফারি রুটের একটি প্রধান সেতু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেটিও মেরামত করা হচ্ছে। দুধিয়ায় অস্থায়ী সেতু তৈরির কাজ জোরকদমে চলছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের কালিখোলা সেতু আংশিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে। বাকিটা মেরামতের কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির ৩০ টির বেশি সড়ক, সেতু ও কালভার্টে মেরামত চলছে।
ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে হড়পা বানে আগের স্টিলের সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এদিকে পাহাড়ে হড়পা বান ও ভূমিধসের পরবর্তী সময়ে বিকল্প রাস্তা দিয়ে সরকারি বাস পরিষেবা চালু করেছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগম (এনবিএসটিসি)। জলবাহিত সংক্রমণ ঠেকাতে পুকুর ও জলের উৎস জীবাণুমুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। মাছ চাষ পুনরায় শুরু করতে এবং স্থানীয় জীবিকা ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে। ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে কৃষি, সড়ক ও ঘরবাড়ির ক্ষতির হিসাব তৈরি করা হয়েছে। এদিকে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ সামগ্রী বন্টনের কাজ অব্যাহত রয়েছে।
শনিবার খড়িবাড়ির ডাঙ্গুজোত এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করে ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। তিনি এদিন ময়নাগুড়ির বানভাসি এলাকাতেও যান। দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা জানান, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা উত্তরের বানভাসি এলাকায় ত্রাণ পাঠিয়েছেন। এদিন ফুলবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পোড়াঝার অঞ্চল পরিদর্শন করেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। সেখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যায় নষ্ট হয়ে যাওয়া নথি তৈরির জন্য বিশেষ ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়।