অর্ণব আইচ: আনন্দপুর আর সার্ভে পার্কে পর পর লুটপাট। কখনও বা ঘরের লক ভেঙে সোনা লুঠ। আবার কখনও বা একসঙ্গে নিয়ে উধাও দুষ্কৃতী। পুজোর মধ্যে হওয়া এই ঘটনাগুলির ভিত্তিতে একের পর এক অভিযোগ দায়ের। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তদন্ত করতে গিয়ে লালবাজারের গোয়েন্দাদের নজর পড়ে নাটের গুরু ইস্তাফিরের দিকে। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ শহরতলির আক্রা-সন্তোষপুর এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে সেই মহম্মদ ইস্তাফিরের সন্ধান পেলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। তাকে জেরা করেই চোরাই জিনিস উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, পুজোর সময় দক্ষিণ কলকাতার রিজেন্ট পার্ক ও বাঁশদ্রোণীতে দু’টি বাড়ির দরজা ভেঙে সোনার গয়না চুরির ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন। বাবলু আচার্য, মহম্মদ করিম ও মহম্মদ ইলিয়াস নামে ওই তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ পুরো গয়না উদ্ধার করেছে। সূত্রের খবর, চুরির পর ওই গয়না বাইরে বিক্রির ছক কষলেও শেষ পর্যন্ত দুষ্কৃতীরা তা বিক্রি করতে পারেনি। তাই তাদের লুকানো জায়গা থেকেই ওই চোরাই গয়না গোয়েন্দারা উদ্ধার করেন।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, পুজোর সময় থেকেই দক্ষিণ ও পূর্ব কলকাতার বিভিন্ন এলাকা টার্গেট করে দুষ্কৃতীরা। আনন্দপুরের উত্তর পঞ্চান্নগ্রামের এক বাসিন্দার অভিযোগ, তিনি ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে পরিজনদের বাড়িতে যান। ফিরে এসে দেখেন, দরজার লক ভাঙা। সারা বাড়ি লন্ডভন্ড। আলমারির লক ভেঙে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নগদ ও চার লক্ষাধিক টাকার সোনা ও রুপোর গয়না নিয়ে উধাও হয়েছে লুঠেরা। এই ব্যাপারে আনন্দপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। আবার পুজোর আবহেই সার্ভে পার্ক এলাকায় একটি বাড়ি থেকেও সোনার গয়না লুঠপাটের অভিযোগ দায়ের হয়।
সন্তোষপুরের সাউথ অ্যাভিনিউয়ের একটি বাড়িতে কেউ ছিলেন না। রাতে বাড়ি ফিরে দেখেন, আলমারির দরজায় ফাঁক। তিনি দেখেন, আলমারির লকারের মধ্যে একটি গোপন কুঠুরির ভিতর তিনি গয়না রাখতেন। অথচ সেই কুঠুরির ভিতর থেকেই যাবতীয় গয়না লুঠ করে পালিয়েছে দুষ্কৃতী। এই ব্যাপারেও সার্ভে পার্ক থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। আবার আনন্দপুর এলাকার মাদুরদহের হোসেনপুরে একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন কয়েকজন নির্মাণকর্মী। কখন দুষ্কৃতী ভিতরে প্রবেশ করেছে, তাঁরা কেউ বুঝতে পারেননি। কাছেই রাখা তিনটি মোবাইল নিয়ে উধাও হয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। এই ব্যাপারে আনন্দপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়।
এই অভিযোগগুলির ভিত্তিতেই গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করতে শুরু করে। আনন্দপুর ও সার্ভে পার্ক এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজ দেখতে শুরু করেন গোয়েন্দারা। তাঁদের নজরে আসে যে, এলাকায় ঘোরাঘুরি করছে মহম্মদ ইস্তাফির নামে এক দুষ্কৃতী। গোয়েন্দাদের ধারণা হয়, ওই একাধিক লুঠপাটের পিছনে রয়েছে ওই ব্যক্তিই। ‘লোন উলফ’ নামে পরিচিত ইস্তাফির একাই নজর রাখে যে, কোন বাড়িতে লোকজন নেই, অথবা কোথায় ফাঁকা রয়েছে। সুযোগ বুঝেই বাড়িগুলিতে হানা দিয়ে সোনার গয়না, নগদ টাকা, মোবাইল, বৈদ্যুতিন সামগ্রী যা হাতের সামনে পায়, তা নিয়েই পালায়। এবার লালবাজারে তাকে জেরা করেই লুঠ হওয়া সামগ্রী উদ্ধারের চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।