• অপমানের প্রায়শ্চিত্ত, ব্রাহ্মণের পা ধোয়া জল খেতে বাধ্য করা হল ওবিসি যুবককে! মধ্যপ্রদেশে মধ্যযুগীয় বর্বরতা
    আজকাল | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: জাতিগত বৈষম্যের এক লজ্জার উদাহরণ মধ্যপ্রদেশে। দামোহ জেলার এক যুবককে একজন ব্রাহ্মণ ব্যক্তির পা ধুইয়ে জল পান করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ। বিষয়টিকে নিয়ে শোরগোল হলেও অবশ্য এমন ঘটনার সঙ্গে যুক্তরা সকলেই বিষয়টিকে তুচ্ছ বলে মনে করছেন। ঘটনার রাজনীতিকরণের নিন্দা করা হয়েছে।

    বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগ সহ একাধিক ধারায় পুলিশে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কুশওয়াহা সম্প্রদায়ের একজন সদস্যের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

    জানা গিয়েছে, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর (ওবিসি) সম্প্রদায়ের পুরুষোত্তম কুশওয়াহাকে ব্রাহ্মণ অন্নু পান্ডের পা ধুইয়ে জল পান করাতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁকে ৫,১০০ টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল এবং ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিল।

    গ্রাম-স্তরের বিরোধকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। সাতারিয়া গ্রামে পুরুষোত্তম কুশওয়াহা এবং অন্নু পাণ্ডের বসবাস। এলাকায় মদ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও, অন্নু পাণ্ডের বিরুদ্ধে মদ বিক্রি চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ধরা পড়লে, গ্রামবাসীরা তাঁকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে এবং ২,১০০ টাকা জরিমানা করে। শাস্তি মেনে নিয়েছিলেন পাণ্ডে। 

    কিন্তু বিষয়টি অন্যদিকে মোড় নেয় যখন পুরুষোত্তম জুতোর মালা পরা আন্নুর একটি এআই দিয়ে তৈরি ছবি শেয়ার করেন। যদিও তিনি কয়েক মিনিটের মধ্যেই পোস্টটি মুছে ফেলেন এবং ক্ষমা চান। তবে গ্রামবাসীদের কেউ কেউ এই কাজটিকে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের প্রতি অপমান বলে শোরগোল ফেলে দেন। এরপরই গ্রাম্য বিবাদ জাতিগত দ্বন্দ্বের রূপ নেয়।

    স্থানীয় সূত্র অনুসারে, ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের একটি দল একত্রিত হয়ে পুরুষোত্তমকে তাঁর কাজের জন্য "প্রায়শ্চিত্ত" করার নিদান দেন। চাপের মুখে, ওবিসি সম্প্রদায়ের যুবক পুরুষোত্তমকে ব্রাহ্মণ যুবক অন্নুর পা ধুয়ে সেই জল পান করার এবং সমগ্র সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার রীতি পালন করতে বাধ্য করা হয়। ভাইরাল ভিডিও-তে পুরুষোত্তমকে হাঁটু গেড়ে বসে ব্রাহ্মণ অন্নুর পা ধোয়া জল খেতে দেখা যাচ্ছে। 

    ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর, অন্নু ও পুরুষোত্তম দু'জনেই ক্ষোভ প্রশমিত করার চেষ্টা করেছিলেন। ঘটনা জানাজানি হতেই পুরুষোত্তম সকলকে ভাইরাল ফুটেজটি ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে ফেলার আবেদন জানান। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, "আমি ভুল করেছি, এবং আমি ক্ষমা চেয়েছি। অন্নু পাণ্ডে আমার পরিবারের গুরু। দয়া করে এটিকে রাজনৈতিক করে তুলবেন না।" অন্নু পাণ্ডেও ঘটনাকে "পারস্পরিক" বিষয় বলে অভিহিত করে জানান সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, "কিছু লোক এটিকে রাজনীতিকরণ করছে। আমাদের মধ্যে একটি গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক রয়েছে। আমি তাঁকে অপমান করিনি। পুরুষোত্তম যা করেছে তা স্বেচ্ছায় করেছিল।"

    ঘটনাটিকে স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, মর্মান্তিক দৃশ্যগুলি গ্রামীণ ভারতের সামাজিক কাঠামোর মধ্যে এখনও গভীরভাবে প্রোথিত জাতি বৈষম্যের কথাই তুলে ধরেছে। 
  • Link to this news (আজকাল)