রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: সততার নজির! সোনার গয়না ভর্তি একটি ব্যাগ বাসস্ট্যান্ডে কুড়িয়ে পেয়েও করিমপুর থানায় ফেরত দিলেন এক পরিবহন কর্মী। ওই কর্মীর নাম পরিতোষ বিশ্বাস। রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার করিমপুর বাস স্ট্যান্ডে। পরে পুলিশের তৎপরতায় ব্যাগের আসল মালিককের হাতে ব্যাগটি তুলে দেয়।
পুলিশ ও ব্যাগের মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, হোগলবেড়িয়া থানার দুর্লভপুর গ্রামের পূজা হালদার এদিন বগুলা যাবেন বলে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন। স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডের বিশ্রামাগারে বসে ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী, শাশুড়ি ও এক বছর তিন মাসের সন্তান। বিশ্রামাগারে বাসের অপেক্ষায় বসে থাকার সময় স্বাস্থ্য কর্মীরা তাঁর ছেলেকে দেখতে পেয়ে পোলিও খাওয়ানোর কথা বলেন। সেই সময় বাচ্চাকে শান্ত করতে হাতে থাকা সোনার গয়নার ব্যাগটি পাশের চেয়ারের উপর রেখে দেন পূজা। সেই সময় হঠাৎ করেই বাসের সময় হয়ে যায়। তাড়াহুড়োয় মনের ভুলে বাসস্ট্যান্ডের চেয়ারে ব্যাগটি রেখে সবাই বাসে উঠে পড়েন।
সেই সময় করিমপুর বাসস্ট্যান্ডের পরিবহণ কর্মী পরিতোষ বিশ্বাস ফেলে যাওয়া ব্যাগটি দেখতে পান! প্রথমে সেটি খুলবেন কিনা ইতস্তত করলেও পরে ব্যাগটি খুলে দেখতে পান তাতে সোনার অলংকার রয়েছে। এরপর আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ করিমপুর থানায় জমা দেন।
পরিতোষবাবু জানান, ”বাস ছেড়ে যাওয়ার মিনিট পনেরো বাদে প্রতীক্ষালয়ের চেয়ারের পাশে একটি ছোট্ট ব্যাগ আমার নজরে আসে। ব্যাগ খুলে সোনার গহনা কিছু টাকা ও কসমেটিক ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাগজপত্র দেখতে পাই। কোনরকম দেরি না করে সোজা করিমপুর থানায় জমা করে আসি। যাতে করে সঠিক ব্যক্তি তাদের ফেলে যাওয়া ব্যাগ ও ব্যাগের মধ্যে থাকা জিনিস গুলো ফিরে পায়।”
ওই ব্যাগ ফেরত পেয়ে যাত্রী পূজা হালদারের স্বামী বাচ্চু হালদার জানান, ”করিমপুর থেকে প্রায় ৪০ কিমি দূরে তেহট্ট পর্যন্ত চলে গিয়ে হঠাৎ ওই ব্যাগের কথা মনে পড়ে। ব্যাগ কোথায় হারিয়ে গিয়েছে তা আমরা কেউই খেয়াল করতে পারছিলাম না। প্রায় চার লক্ষ টাকার সোনার অলংকার ছিল। খোঁজ করতে করিমপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারি করিমপুর বাসস্ট্যান্ডের এক কর্মী পরিতোষ বিশ্বাস ব্যাগটি পেয়ে করিমপুর থানায় জমা করেছেন।”
বাচ্চু জানান, ”সঙ্গে সঙ্গে থানায় ছুটে যাই। যদিও তার আগেই ব্যাগে থাকা সচিত্র পরিচয় পত্র খতিয়ে দেখে থানা থেকেই আমাদের প্রথম ফোন করে। আমরা সমস্ত জিনিস সঠিকভাবে পেয়েছি।”
পরিবারের পক্ষ থেকে ওই পরিবহণ কর্মী এবং পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাচ্চু আরও জানান, ”এখনও যে পৃথিবীতে সৎ মানুষ আছে এটাই তার প্রমাণ।” অন্যদিকে করিমপুর থানার আইসি সিকান্দার আলম জানান, ওই পরিমাণ কর্মী সোনার গয়না ভর্তি ব্যাগটি থানায় জমা দেওয়ার পরপরই আমরা সঠিক ব্যক্তির খোঁজ করতে থাকি। ওই ব্যক্তিকে খুঁজে ব্যাগ ফেরত দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পরিবহন কর্মীকে করিমপুর থানার পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।”