• সুপ্রিম কোর্টকে শিখণ্ডী করেই বাংলাকে বঞ্চনা
    বর্তমান | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
  • সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: ১০০ দিনের কাজে বাংলাকে বঞ্চনার রাজনীতিতেই কি সিলমোহর দিয়ে রেখেছে মোদি সরকার? ১ আগস্ট থেকে কাজ শুরুর জন্য হাইকোর্টের রায়, তাতে সাড়া না দেওয়া, সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার মুখে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের আবেদন এবং এখনও দুর্নীতির ধুয়ো তুলে বাংলার প্রান্তিক মানুষের টাকা ও কাজ আটকে রাখা। এভাবেই বৃত্তাকারে চলছে ১০০ দিনের কাজের রাজনীতি। আর এখন এই ইস্যুতে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক ‘শিখণ্ডী’ হিসেবে খাড়া করছে সুপ্রিম কোর্টকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান স্বয়ং ‘বর্তমান’কে একান্তে বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া তো আমরা দিয়ে দিতেই চাই। কোনও রাজ্যেরই টাকা আটকে রাখা আমাদের লক্ষ্য নয়। কিন্তু কী করব? সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা চলছে! দেখতে হ্যায়, কেয়া হোতা হ্যায়।’ কিন্তু মামলা তো কেন্দ্রই করেছে। শিবরাজের মন্তব্য, ‘ওটা মন্ত্রকের লিগ্যাল টিমের পরামর্শ।’

    অর্থাৎ, কথায় উদারতা থাকলেও কাজে বঞ্চনা। রাজনৈতিক মহলের মতে, এসবই অজুহাত। মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি আইনে ১০০ দিনের কাজে দেশের মধ্যে শীর্ষে ছিল পশ্চিমবঙ্গ। কাজও হয়েছে জোরকদমে। তারই মধ্যে সামান্য আর্থিক (৯.২০ কোটি টাকার) দুর্নীতি সামনে আসায় গোটা রাজ্যের গরিবদের ‘হকে’র উপর আঘাত হেনেছে মোদি সরকার। রাজ্যের হিসেবে বকেয়া প্রায় ৪৪ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। তৃণমূল সরকার বার বার কেন্দ্রের কাছে দরবার করে বলেছে, যারা দুর্নীতি করেছে, তাদের শাস্তি দিক কেন্দ্র। কিন্তু সবাইকে কেন বঞ্চনা? দিল্লি থেকে বারবার তদন্তকারী দল বাংলায় গিয়েছে। তাদের সব প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছে নবান্ন। সেই মর্মে কেন্দ্রকে চারবার চিঠি দিয়েছে রাজ্য সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেছেন। তাও বাংলায় ১০০ দিনের কাজ শুরু হয়নি। মেলেনি প্রাপ্য বকেয়াও। 

    ৩১ জুলাই হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে কেন্দ্র। ‘পশ্চিমবঙ্গ খেত মজদুর সমিতি’ মূল বিবাদী। বাকি রাজ্য সরকার সহ রাজ্যের প্রায় সব জেলাশাসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর মামলাটি শুনানির জন্য উঠেওছিল। কিন্তু দেশের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা অনুরোধ করেন, মামলা পিছিয়ে দেওয়া হোক। সেই মতো আজ, সোমবার শীর্ষ আদালতে এই মামলার শুনানি নির্ধারিত আছে। বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চে। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, মোদি সরকারের পরিকল্পনা হল, আদালতে তারিখের পর তারিখ চেয়েই সময় পার করার। না হলে কেন্দ্রের পক্ষে ছ’জন আ‌‌ইনজীবী আদালতে হাজির থেকেও কেন মামলা পিছনোর আবেদন করা হল? আজও কি মুলতুবির আবেদন করে পার পেয়ে যাবে কেন্দ্র? নজর শীর্ষ আদালতে। 
  • Link to this news (বর্তমান)