শাঁখা পরে বিলের জলে অন্তর্হিত হয়েছিল আট বছরের করুণাময়ী
বর্তমান | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: বহরমপুরের বিষ্ণুপুর কালীবাড়িতে করুণাময়ী রূপে বিরাজ করেন মা কালী। প্রতিবছর কালীপুজোর সন্ধ্যায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষের ঢল নামে এই মন্দিরে। সাড়ে তিনশো বছরের এই পুজো ঘিরে মানুষের মধ্যে উন্মাদনা যথেষ্ট। তন্ত্রমতে পুজো হলেও, গত দুই বছর ধরে এই মন্দিরে নিষিদ্ধ হয়েছে বলি। তবে মায়ের ভোগে পাঁঠার মাংস, ইলিশ মাছ সহ নানা আমিষ পদ দেওয়ার রেওয়াজ অব্যাহত। অত্যন্ত জাগ্রত এই মন্দিরে মানুষ এসে সুখ ও শান্তি কামনা করেন।
জনশ্রুতি আছে যে, আওরঙ্গজেবের আমলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাশিমবাজার কুঠির গোমস্তা ছিলেন কৃষ্ণইন্দ্র শর্মা। তাঁর পদবি ছিল হোতা। তিনি এই মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে শোনা যায়। যে ইতিহাস এখনও মুখে মুখে ফেরে তা হল, কাশিমবাজার কুঠিতে যাওয়ার জন্য হোতার বছর আটেকের মেয়ে করুণাময়ী খুব জেদ ধরে। পথকষ্টে ক্লান্ত হওয়ায় নিজে না গিয়ে মেয়েকে এক পরিচিত শাঁখারির সঙ্গে বাড়ি পাঠান তিনি। বাড়ি যাওয়ার পথে করুণাময়ী শাঁখারির কাছ থেকে বায়না করে শাঁখা পরে। এরপর নৌকা করে যাওয়ার সময়ে শাখারির হাত ছাড়িয়ে জলের উপর বসে পড়ে। তারপর বিষ্ণপুর বিলের জলে অন্তর্হিত হয়ে যায় সে। অনেক ডাকাডাকির পরও করুণাময়ী আর জলে থেকে ওঠেনি। এই কথা জানতে পেরে তার পিতা ছুটে আসেন বিলের কাছে। তিনি এসে দেখতে পান, শাখা পরা দু’টো হাত ধীরে ধীরে বিলের জলে অন্তর্হিত হয়ে যাচ্ছে।
হোতা মেয়ের শোকে বিষ্ণুপুর মহাশ্মশানে ধ্যান শুরু করেন। তখন তিনি মা কালীর দর্শন পান এক গাছের কোটরে। তারপরেই মাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয় দেবী কালীরূপে। কথিত আছে, পরবর্তীকালে লালগোলার রাজা যোগেন্দ্রনারায়ণ রায় বর্তমান কালী মন্দিরটি এখানে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় থেকে আজও নিত্যপুজো হয়ে আসছে এই মন্দিরে। কালীপুজোর সময়ে পুজোর জাঁকজমক আরও বাড়ে।
বিষ্ণুপুর কালী মন্দিরের সেবাইত বীতশোক পান্ডে বলেন, কালীপুজোর অমাবস্যায় তন্ত্রমতে এখানে পুজো হয়। আগে এখানে ছাগল বা পাঁঠাবলি হতো। ২০২১ সাল থেকে পুরোপুরি বলিপ্রথা বন্ধ। এবারও পুজোর পরে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ প্রসাদ গ্রহণ করবেন। শুধু এই পুজোর দিন নয়, নিত্যদিন চলে মায়ের পুজো। প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার বিশেষ পুজো হয়। খাগড়ার বাসিন্দা জ্যোৎস্নারানি দাস বলেন, মায়ের কাছে এলে একটা আলাদা শান্তি হয়। মনের সকল ইচ্ছা পূরণ করেন মা। প্রতিবারই পুজো দিতে এখানে আসি। কালীপুজোর সময় বেশি ভিড় হয়। জেলার বাইরে থেকেও অনেকে এখানে পুজো দিতে আসেন।