ডবল সেঞ্চুরি প্রতি কেজি সর্ষের তেলের দাম! দর এক রাখতে নামী সংস্থার প্যাকেটে কমছে পরিমাণ, অভিযানে নামছে ঝাড়গ্রাম প্রশাসন
বর্তমান | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: সর্ষের তেলের দামের ঝাঁঝে চোখে জল আমজনতার। খোলা বাজারে ২০০ টাকা কেজি সর্ষের তেলের। তিনমাস আগেও জেলায় সর্ষের তেলের দাম ছিল ১৬০ টাকা কেজি। পাশাপাশি নামী ব্র্যান্ডের সর্ষের তেলের প্যাকেটের দাম অপরিবর্তিত রেখে তেলের পরিমাণ কমানো হচ্ছে। বিষয়টি সামনে আসতেই জেলার বিপণন দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। ঝাড়গ্রাম জেলা কৃষি বিপণন দপ্তরের আধিকারিক শ্রাবণী চক্রবর্তী এদিন বলেন, সর্ষের তেলের দাম বেশ কিছুটা বেড়েছে। নামী ব্রান্ডের সর্ষের তেলের প্যাকেট তেলের পরিমাণ কমিয়ে দাম অপরিবর্তিত রাখার বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করা হচ্ছে। বড় শপিং মল ও ছোট মুদিখানার দোকানে অভিযান চালানো হবে। পুজোর মরশুমের আগে থেকেই সর্ষের তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সাধারণ মানুষ সর্ষের সর্ষের তেলের ব্যবহার কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। সয়াবিন তেল বা সূর্যমুখী তেল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। সাধারণ পরিবারে সর্ষের তেল না হলে চলে না। রোজকার রান্নায় নানা পদের সঙ্গে ভাজাভুজির থাকে। আলুভাজা, বেগুনভাজার পাশাপাশি মাছ, ডিম ভাজা করতে দু' বার ভাবতে হচ্ছে। পুজোর মরশুমে নানা ধরনের রান্নার পদ হয়। সর্ষের তেল ছাড়া রান্নার স্বাদ আনা যায় না। দাম বাড়ায় খাবারের অভ্যাসে অনেকেই দাঁড়ি টানতে বাধ্য হয়েছেন। সর্ষের তেল দিয়ে চপ, বেগুনি, সিঙাড়া ভাজা হয়। সেখানেও বাধ সাধছে দাম। জেলার পাইকারি সর্ষের তেল বিক্রেতাদের বক্তব্য, বহুজাতিক সংস্থাগুলি এখন একচেটিয়াভাবে বাজারে তেলের দামের নিয়ন্ত্রণ করছে। গ্ৰামীণ এলাকায় আগে উৎপাদিত সর্ষের বীজ থেকে তেল তৈরি হতো। সেখান থেকে জোগান আসত। সেইসব এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যে কারণে সর্ষের তেলের দামের নিয়ন্ত্রণ আর স্থানীয় বাজারের হাতে আর নেই। শহরের বাছুরডোবা এলাকার মুদিখানার দোকানদার সুভাষ দাস বলেন, পুজোর আগে থেকেই সর্ষের তেলের দাম বেড়ে গিয়েছে। সাধারণ ক্রেতারা আমার দোকানে আসেন। দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক ক্রেতাই সর্ষের তেল কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। প্যাকেট সর্ষের তেলও বিক্রি করি। গত দু' মাস ধরে দেখছি নামী ব্রান্ডের সর্ষের তেলের পাউচের প্যাকেটে দাম অপরিবর্তি রেখে তেলের পরিমাণ কম দেওয়া হচ্ছে। সর্ষের তেলের পাউচে ৯১০ গ্ৰামের দাম ছিল ১৬৫ টাকা। এখন সেখানে ৮২৫ গ্ৰাম লেখা থাকছে। দাম একই। এই পরিবর্তনের কারণ জানি না। বেশিরভাগ ক্রেতাই পরিমাণ কত দেখেন না। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে অস্বস্তি বোধ করছি। শহরের সুভাষ পার্ক মোড়ের এক তেলেভাজা বিক্রেতা এদিন বলেন, সর্ষের তেলের দাম গত তিনমাসে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। সর্ষের তেল ছাড়া আলুর চপ, ফুলুরি, বেগুনির ভালো স্বাদ হয় না। স্বাদ বদলালে চেনা খদ্দের প্রশ্ন করবে। দাম বাড়ায় আমাদের মতো তেলেভাজার দোকানদারদের খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। শহরের নতুনডিহী এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় কর্মকার বলেন, আমার পরিবারে সাতজন সদস্য। খাবারের পাতে প্রতিদিন ভাজাভুজি থাকে। ছুটির দিনে নানা ধরনের রান্না হয়। তাতে সর্ষের তেল অনেকটাই লাগে। তেলের দাম বাড়ায় কম করে কিনতে হচ্ছে। খাবারে অভ্যাসে বদল আনা ছাড়া কোনও উপায় থাকছে না।