রামপুরহাটে ছাত্রী ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে উত্তাল বেড়ো, শিক্ষকের গ্রামে বিশাল মিছিলে ফাঁসির দাবি
বর্তমান | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: বীরভূমের রামপুরহাটে আদিবাসী স্কুলছাত্রীকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত মনোজ পালকে অবিলম্বে ফাঁসি দিতে হবে। এমনই দাবিতে রবিবার শিক্ষকের গ্রাম পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর থানার গদি বেড়ো উত্তাল হয়ে ওঠে। এদিন রঘুনাথপুর মহকুমার নাগরিক সমাজ শিক্ষকের গ্রামে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভসভা করে। বেড়ো বড় পুকুর থেকে বিশাল মিছিল শুরু হয়। বেড়ো উচ্চতর বিদ্যালয়ে তা শেষ হয়। প্রতিবাদ মিছিলে মহকুমা এলাকার হাজার হাজার মানুষ ধামসা, মাদল, ঝাঁটা, জুতো নিয়ে শামিল হয়। প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বিক্ষোভ সভায় শামিল হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। তবে শিক্ষকের বাড়ির সদস্যরা যাতে আক্রান্ত না হয় বা কেউ বাড়ির কোনও ক্ষতি করতে না পারে, তার জন্য এলাকায় বিশাল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষকের বাড়িটি ঘিরে রাখে।
সম্প্রতি রামপুরহাটের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মনোজের বিরুদ্ধে সপ্তম শ্রেণির এক আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুনের অভিযোগ ওঠে। দেহ টুকরো টুকরো করে বস্তাবন্দি করা হয়। তারপর তা ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনায় গোটা রাজ্য তোলপাড় হয়। ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত শিক্ষককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে রাজ্যের আদিবাসী সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের একটাই দাবি, দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে মনোজকে ফাঁসি দেওয়া হোক। নৃশংস হত্যাকারী শিক্ষকের বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোজ ছাত্র জীবন থেকেই নানা কলঙ্কিত ঘটনায় জড়িত। চাকরি পাওয়ার আগে সে নিজের এক আত্মীয়ের মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায়। বাম আমলে সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করত। সেখানে টিউশনি পড়াত। অভিযোগ, বিদ্যালয় ও টিউশনের ছাত্রীদের নানা সময় উত্ত্যক্ত করত। যার ফলে এলাকার বাসিন্দারা বেশ কয়েকবার ওই বিদ্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।
শুধু তাই নয়, বিয়ের পরেও স্ত্রীকে মারধর করতেন। ফলে প্রাথমিক শিক্ষিকা স্ত্রী অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হন। এসবের মাঝে অভিযুক্ত শিক্ষক এলাকার একটি মেয়েকে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে অপকর্ম করে। আপত্তিকর ভিডিও তুলে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছডিয়ে দেয়। এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, তৎকালীন উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বাম নেতাদের সঙ্গে মনোজের পরিবারের যোগাযোগ ভালো থাকায় সমস্ত অপকর্ম ঢাকা পড়ে যায়। তৎকালীন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাব খাটিয়ে প্রতিটি ঘটনায় ‘আপস মীমাংসা’ করে মনোজ বেঁচে যায়। এবারও সে বাঁচার জন্য বিভিন্ন পথ অবলম্বন করেছিল। কিন্তু, শেষরক্ষা হয়নি।
এদিন মিছিলে সামিল হাজারি বাউরি, শরিফুদ্দিন আনসারী, রামেশ্বর মুর্মু, মলিন্দ মাণ্ডি বলেন, এমন নৃশংস ঘটনার একটাই শাস্তি, ফাঁসি। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে তাকে অবিলম্বে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত। যাতে মনোজের শাস্তি দেখে আর কেউ এমন নৃশংস কাজ করার কথা না ভাবে। এলাকায় কোথাও কোনও মহিলা অত্যাচারিত হলে ভয় দূর করে এগিয়ে আসতে হবে।
মিছিলে শামিল মহিলাদের মধ্যে নিবেদিতা টুডু, নমিতা বাউরি, দূর্বা চক্রবর্তী বলেন, মনোজের মতো লোকের জন্য পুরুলিয়ার মতো একটা শান্ত জেলার বদনাম হয়েছে। ওর অনেক আগেই শাস্তি হওয়া উচিত ছিল। ওই শিক্ষকের বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই।