নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: টানা ২২ ঘণ্টার দুর্ভোগের পর রবিবার সকাল ১১টায় মারিশদায় দীঘাগামী ১১৬বি জাতীয় সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। শনিবার দুপুর ১টায় কালভার্ট ধসে দু’ভাগ হয়ে গিয়েছিল জাতীয় সড়ক। তারপর থেকেই ভোগান্তি শুরু হয়েছিল। কাঁথি ও দীঘাগামী সমস্ত যানবাহন বাজকুল এবং হেঁড়িয়া থেকে এগরা দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কাঁথি পৌঁছতে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পেরতে হয়েছে। রবিবার রাজ্যজুড়ে রাজ্য পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পদে লিখিত পরীক্ষা ছিল। পূর্ব মেদিনীপুরের ১৪টি পরীক্ষা কেন্দ্রের সবকটি তমলুক মহকুমার মধ্যে করা হয়েছিল। কাঁথি, রামনগর এলাকার অনেক পরীক্ষার্থী এগরা হয়ে ঘুরপথে পরীক্ষা কেন্দ্রে সময়মতো পৌঁছতে পারেননি। সকাল সাড়ে ১০টার পর পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছনোয় অনেক পরীক্ষার্থী এদিন পরীক্ষা দিতে পারেননি। তাঁরা ভেনুতে ঢুকতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েও এগরা হয়ে ঘুরপথে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে অনেকটা সময় লেগেছে বলে জানান। কেউ কেউ বলেন, মারিশদায় জাতীয় সড়ক দু’ভাগ হয়ে যাওয়ার খবর তাঁদের জানা ছিল না। দেরিতে পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হওয়া পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে না পেরে ফিরে যান।
শুক্রবার রাতে মারিশদা থানার লোকাল বোর্ড এলাকায় দীঘাগামী ১১৬বি জাতীয় সড়কে একটি জীর্ণ কালভার্টের একদিকে ধস নামে। শনিবার সকাল থেকেই পূর্ত(এনএইচ) বিভাগের খড়্গপুর ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার জয়ন্ত গড়াইয়ের উপস্থিতিতে মেরামত শুরু হয়। ধসে যাওয়া অংশে মেরামত চললেও বাকি অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু, দুপুর ১টা নাগাদ কালভার্টের গোটা অংশই ধসে পড়ে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দীঘাগামী ওই জাতীয় সড়ক। নন্দকুমার থেকে কাঁথি ও দীঘা যাওয়ার মেন সড়ক এভাবে বিচ্ছিন্ন হতেই জাতীয় সড়কের দু’দিকে প্রচুর গাড়ির লাইন পড়ে যায়। পুলিশ ও প্রশাসন এনিয়ে ঘন ঘন এনএইচ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতের কাজ শুরু হয়। বিকল্প হিসেবে ১১৬বি জাতীয় সড়কে বাজকুল এবং হেঁড়িয়া থেকে যাবতীয় যানবাহন এগরা দিয়ে ঘুরিয়ে কাঁথিতে পাঠানো হয়। কিন্তু, তাতে অতিরিক্ত ৫৫ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরতে হচ্ছিল। তাই একেবারে নাজেহাল অবস্থা। শনিবার সারারাত ধসে পড়া কালভার্টের অংশে কাজ হয়েছে। সকাল ১১টায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে ২২ ঘণ্টার দুর্ভোগের অবসান ঘটে। ট্রাফিক ডাইভার্সান বন্ধ করে জাতীয় সড়ক বরাবর গাড়ি ছাড়া হয়। তবে, জাতীয় সড়কে ওই জীর্ণ কালভার্ট সময়মতো কেন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়নি, তানিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে।
রবিবার তমলুক, কোলাঘাট ও নন্দকুমার থানার ১৪টি পরীক্ষা কেন্দ্রে সাব ইন্সপেক্টর পদে লিখিত পরীক্ষা ছিল। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে রামচন্দ্রপুর বৈকুণ্ঠ বিদ্যাপীঠে নির্ধারিত সময়ের পর ১৮ জন, নন্দকুমারের ব্যবত্তারহাট আদর্শ হাইস্কুলে ১৫ জন, শ্রীকৃষ্ণপুর হাইস্কুলে ১৩ জন সহ প্রত্যেকটি কেন্দ্রে অনেক পরীক্ষার্থী সকাল সাড়ে ১০টার পর আসার জন্য কেন্দ্রে ঢুকতেই পারেননি। তাঁদের বক্তব্য, কাঁথি, রামনগর এবং মারিশদা থানা এলাকা থেকে এগরা হয়ে ঘুরপথে আসতেই অতিরিক্ত সময় লেগেছে। তবে, সার্বিকভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রায় অর্ধেক পরীক্ষার্থী গরহাজির ছিলেন। যেমন, রামচন্দ্রপুরে ৫০৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৫২জন উপস্থিত ছিলেন। ব্যবত্তারহাটে ৪৮০ জনের মধ্যে ২৭৩জন, রাজকুমারী সান্ত্বনাময়ী গার্লসে ৫০৪ জনের মধ্যে ২৫৩ জন উপস্থিত ছিলেন। এতবেশি সংখ্যক অনুপস্থিতির পিছনে যোগাযোগের এই সমস্যা একটা কারণ বলে অনেকেই বলছেন।
পূর্ত(এনএইচ) বিভাগের খড়্গপুর ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণেই পুরনো ওই সেতু ধসে পড়ে যায়। আমরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করি। রবিবার সকাল ১১টা থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।