দেশের জন্যই শহিদ হয়েছেন সুজয়, পরিবারকে সান্ত্বনা অন্যান্য সেনা বন্ধুদের
বর্তমান | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: ‘দেশের জন্যই শহিদ হয়েছেন সুজয়। সীমান্তে সুজয়ের মতো সেনা জওয়ানরা জেগে থাকে বলেই আপামর দেশবাসী শান্তিতে ঘুমাতে পারে। ওঁর মৃত্যুতে কান্না নয়, বরং গর্ব করুন’- এভাবেই কাশ্মীরে নিহত সেনা জওয়ান সুজয় ঘোষের শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন অন্যান্য সেনা জওয়ানরা।
শনিবার সুজয়ের মৃতদেহ যে রাজনগরের কুণ্ডিরা গ্রামে ফিরছে সেই খবর আগেই পৌঁছেছিল কটোয়ার তাপস ঘোষ, কীর্ণাহারের ফুটিসাঁকোর বাসিন্দা বরুণ হাজরাদের কাছে। তাপস প্যারা রেজিমেন্টের স্পেশাল ফোর্সের ১১ নম্বর ব্যাটালিয়নে ও বরুণ ২৯ নম্বর ব্যাটালিয়নে রয়েছেন। পুজোর ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন তাঁরা। সুজয়ের মৃতদেহ শনিবার গ্রামে আসছে শুনেই তাঁরা কুণ্ডিরা গ্রামে এসে পৌঁছন। তাপস বলছিলেন, আমি, সুজয়, বরুণ সবাই একসঙ্গেই ট্রেনিং করেছি। সেই সময় থেকেই আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়। তারপর প্রত্যেকের আলাদা জায়গায় পোস্টিং হয়ে যায়। কিন্তু যোগাযোগ রয়েই গিয়েছে।
একমাত্র ছেলেকে অকালে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন সুজয়ের বাবা রাধেশ্যাম ঘোষ। শনিবার তাঁকে জড়িয়ে ধরে আর এক সেনা জওয়ান বরুণকে বলতে শোনা যায়, ‘মনে রাখবেন, আপনার ছেলে আর পাঁচজনের মতো মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়া বাইক চালাতে গিয়ে, কিংবা ভীরুর মতো আত্মহত্যা করে মারা যায়নি। দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে ও মারা গিয়েছে। ও যে বিভাগে কর্মরত ছিল তা ভারতীয় সেনার অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন। সবাই সুযোগ পায় না। তাই ওর মৃত্যুতে শোক নয়, গর্ব করুন।’ সুজয়ের বাবাকে বলতে শোনা যায়, ‘ছেলেকে নিয়ে তো সবসময় আমরা গর্বিত।’ ওই দুই সেনা জওয়ান সুজয়ের দাদার মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গেও কথা বলেন। তারপরই কিছুটা অভয় পেয়ে কান্নাভেজা গলায় মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ভারতীয় সেনায় যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখত ভাই। দেশের জন্য প্রাণ দেওয়ার কথা বলত। ওর জন্য আমাদের আজ গর্ব হচ্ছে।’
রবিবার বিকেলেও সেনাবাহিনীর কর্তারা সুজয় ঘোষের বাড়ি এসেছিলেন। তাঁরাও সুজয়ের পরিবারকে আশ্বস্ত করেন। দেশের জন্য মৃত্যু কতটা গর্বের, তা বোঝান। রবিবারও সুজয়ের পাড়া ছিল থমথমে। অনেকের বাড়িতে হাঁড়ি চড়েনি। তাঁর বন্ধু দীনবন্ধু ঘোষ বলেন, গ্রামের কারও মন ভালো নেই। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগে জঙ্গিদমন অভিযান চলাকালীন হঠাৎ তুষারঝড় শুরু হওয়ায় নিখোঁজ হয়ে যান দুই বাঙালি জওয়ান সুজয় ঘোষ ও পলাশ ঘোষ। পলাশ মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার রুকুনপুরের বাসিন্দা। শনিবার দু’জনেরই মৃতদেহ এসে পৌঁছয় নিজেদের গ্রামের বাড়িতে। সেনাবাহিনীর নিয়ম মেনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দুই জওয়ানকেই শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।