সংবাদদাতা, রামপুরহাট: টাকা নিয়ে অশান্তির জেরে ছেলের শালার হাতে খুন হয়ে গেলেন এক বৃদ্ধ। রামপুরহাট থানার দখলবাটি গ্রামের এই ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে নিহতের ছেলের বউ।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দখলবাটি গ্রামের বাসিন্দা ওয়াসিম আহমেদ (৬১) পিকআপ ভ্যানে দোকানে দোকানে বোতলবন্দি জল সরবরাহের ব্যবসা করতেন। তাঁর ছেলে তৌসিফ আহমেদও বাবার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। দিন কয়েক আগে বাড়িতে ১৫ হাজার টাকার ইলেকট্রিক বিল আসে। সেই বিলের টাকা জমা করার জন্য গত বৃহস্পতিবার ছেলের কাছে কিছু টাকা চান ওয়াসিম। কিন্তু ছেলের বউ সাহানা পরভিন টাকা দিতে নিষেধ করেন স্বামীকে। শুধু তাই নয়, শ্বশুরকে ‘তুই’ করে সম্বোধন করে অপমান করে বলেও অভিযোগ। বাবার অপমান সহ্য করতে না পেরে স্ত্রীকে চড় মারেন তৌসিফ। অভিযোগ, এরপরই অশান্তি চরমে ওঠে। সাহানা ফোন করে মাড়গ্রামে বাপের বাড়িতে খবর দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সাহানার ভাই পেশায় ভারতীয় সেনার করণিক আসিফ আলি ওরফে সঞ্জু চারচাকা গাড়িতে চেপে এসে তৌসিফের গলা চেপে ধরে, মারধর করে। সেই সময়ে প্রতিবাদ করেন ওয়াসিম। অভিযোগ, তখন গাড়ি থেকে একটি বেসবল ব্যাট বের করে ওয়াসিমের কানের কাছে সজোরে আঘাত করে সঞ্জু। ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন ওই বৃদ্ধ। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে রামপুরহাট মেডিকেলে নিয়ে এসে ভর্তি করেন। পরে ওই বৃদ্ধকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। ঘটনার দিনই ছেলের বউ ও তাঁর ভাইয়ের নামে রামপুরহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বৃদ্ধের স্ত্রী ফতেমা বেগম। পুলিশ মূল অভিযুক্ত আসিফকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করে। আদালত ধৃতের তিনদিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করে।
এদিকে শনিবার বিকেলে বর্ধমান মেডিকেলে মৃত্যু হয় বৃদ্ধর। ঘটনায় পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহতের ভাগনি বলেন, মামা ও মামিমাকে দেখতে পারত না সাহানা। তাই মামা ও মামিমা একই বাড়িতে পৃথক থাকেন। তারপরও প্রায়ই অশান্তি করত সাহানা। সে অধিকাংশ সময়ে এসি চালানোয় ১৫ হাজার টাকা ইলেকট্রিক বিল আসে। মামা বিল মেটানোর জন্য ছেলের কাছে কিছু টাকা চেয়েছিল। কিন্তু সাহানা সেই টাকা তো দিতেই দেয়নি, উল্টে মামাকে অপমান করে। এই নিয়ে অশান্তি হতেই নিজের ভাইকে ডেকে নিয়ে এসে মামাকে খুন করায় সাহানা। আমরা এর বিচার চাই।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে এই মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার ধারা দেওয়া হয়েছিল। পরে বৃদ্ধর মৃত্যু হওয়ায় খুনের ধারা যুক্ত হয়েছে। রবিবার ধৃতকে ফের আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী মণিরুল ইসলাম বলেন, বিচারক অভিযুক্তর আরও ছ’ দিন পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের ছেলের বউয়ের খোঁজ চলছে। যদিও মৃতের পরিবারের দাবি, অভিযোগের পরই সাহানা ও তার ভাইকে ধরেছিল পুলিশ। কেন সাহানাকে ছেড়ে দিল বুঝতে পারছি না।