নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: দক্ষিণবঙ্গের বহু বুথে বিজেপি কমিটি গঠন করতে পারেনি। অধিকাংশ জেলাতেই সংগঠনের অবস্থা তথৈবচ। ভোট বৈতরণী পার হতে বিজেপির ভরসা ভিনরাজ্যের ‘সৈনিক’রা। নভেম্বর মাসের শেষ থেকেই ভিনরাজ্যের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা এরাজ্যে আসতে শুরু করবেন। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন বহিরাগতরা। তাঁরা বুথস্তর পর্যন্ত পৌঁছে যাবেন। বিজেপি সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। এরাজ্যের নেতাদের উপর ভরসা না থাকার জন্যই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহারের নির্বাচনও তারা একই কায়দায় করতে চলেছে। সেই রাজ্যের নির্বাচন শেষ হলেই ‘ভাড়াটে সৈনিক’রা এরাজ্যের বিধানসভা কেন্দ্রগুলির দিকে নজর দেবে। এলাকায় গিয়ে জনসংযোগের কাজ করবেন এরাজ্যের নেতারাই। পরিকল্পনা থাকবে বহিরাগত নেতাদের। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পগুলির সাফল্য বিজেপি বাড়ি বাড়ি তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ করে ‘উজ্জ্বলা’ বা ‘পিএম কিষাণ’ এর মতো প্রকল্পগুলিতে তারা জোর দিতে চাইছে।
বিজেপির এক নেতা বলেন, যেসব প্রকল্পের মাধ্যমে জনতা সরাসরি উপকৃত হয়েছে, সেগুলিতে বেশি জোর দেওয়া হবে। এর মধ্যে নতুন করে আবার উজ্জ্বলা প্রকল্পে গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশের বাছাই করা নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা আসবেন। যেসব নেতার সাংগঠনিক ক্ষমতা বেশি, তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বিজেপির আদি নেতা হিসেবে পরিচিত কেশব কোনার বলেন, ‘ভাড়াটে সৈনিক’ দিয়ে যুদ্ধ জেতা সহজ নয়। রাজ্য নেতৃত্বের উচিত ছিল সংগঠন মজবুত করা। ২০২১ সালের নির্বাচনের স্মৃতি কর্মীরা এখনও ভুলতে পারেননি। বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পর বহু কর্মী আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁদের পাশে নেতারা দাঁড়াননি। সেই কর্মীদের মাঠে নামানো সহজ হবে না। যতই বাইরের নেতাদের নিয়ে আসা হোক না কেন, তাতে কাজ হবে না। বিজেপি নেতা রোহিত সিং বলেন, আমরা লাগাতার কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছি। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। ভয়ে অনেকে সামনে আসছেন না। কিন্তু তাঁদের সমর্থন আমাদের সঙ্গে রয়েছে।
বিজেপি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য উৎসবের মরশুমে বিভিন্ন কর্মসূচি ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুই মেদিনীপুর ছাড়া অধিকাংশ জেলাতেই তাদের কর্মসূচি সফল হয়নি। পূর্ব বর্ধমানের অবস্থা সব থেকে সঙ্গীন। হাতেগোনা কয়েকটি এলাকা ছাড়া তারা কোথাও বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিও সফলভাবে করতে পারেনি। বড় পুজো মণ্ডপগুলির সামনে স্টল তৈরি করতেও তারা ব্যর্থ হয়। অধিকাংশ বড় পুজো মণ্ডপ উদ্বোধনের ডাক পেয়েছিলেন শাসক দলের নেতারা। বিজেপি রাজ্য বা জেলার নেতাদের কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। সংগঠনের বেহাল অবস্থার জন্যই বিজেপি বহিরাগত সৈনিক নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তৃণমূল নেতা তথা বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস বলেন, বিজেপি বাংলাকে বঞ্চনা করেছে। এরাজ্যের মানুষ ভোটে ওদের জবাব দেবে। বাইরে থেকে যত বড় নেতাকে ওরা নিয়ে আসুক না কেন কোনও লাভ হবে না।