লাখ টাকার পার্সিয়ান বদলে সাধারণ বিড়াল! ‘চুরি’র অভিযোগে ধৃত রিজেন্ট পার্কের ক্রেশ মালিক
বর্তমান | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলকাতায় কত কি না চুরি হয়! বাবুদের ব্রিফকেস থেকে গৃহিণীদের নেকলেস। আস্ত পুকুর থেকে বিকেলের সোনা রোদ। বহু কিছুই চুরি হয় মহানগরে। তা বলে বিড়াল! ইয়েস, বিড়াল।
‘কলকাতা থেকে বিড়াল চুরি। পুলিশে অভিযোগ। রিজেন্ট পার্ক থানার হাতে একজন গ্রেফতার। তাঁকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।’ চুম্বকে এই হল খবর। তা সবকিছু ছেড়ে কেন বিড়াল হাতাতে গেলেন অভিযুক্ত?
কারণ এ বিড়াল হল পার্সিয়ান ক্যাট। নরম বড় উলের বলের মতো তুলতুলে। আদুরে। দেখলে চোখ ফেরানো যায় না। বয়স আড়াই বছর। দাম মোটামুটি কয়েক লক্ষ টাকা। এ হেন বিড়াল চুরি কি খুব একটা আশ্চর্যের বিষয়? প্রাণীটি খোয়া গেল কিভাবে?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রিজেন্ট পার্ক এলাকায় একটি ক্রেশ রয়েছে দীপশেখর রায়চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রীর। সেই ক্রেশে প্রাণীদের রাখা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর সেখানে পার্সিয়ান ক্যাটটি রেখে যান সোহেল নামে এক ব্যক্তি। তিনি যাচ্ছেন পরিবার নিয়ে ভিন রাজ্যে বেড়াতে। বিড়ালটি নিয়ে প্রয়োজনীয় নথিপত্র তৈরি করে ক্রেশ কর্তৃপক্ষ। দু’পক্ষের সই সাবুদ হয়। তারপর পোষ্যকে রেখে রওনা দেন সোহেলবাবু। ক্রেশের আর এক মালিক হলেন দীপশেখরবাবুর স্ত্রী। তিনি পুত্রকে স্কুলে ভর্তি করতে আট অক্টোবর দার্জিলিং রওনা দেন। ক্রেশ সামলানোর দায়িত্ব একাই সামলাতে থাকেন দীপবাবু। ৯ অক্টোবর কলকাতা ফেরেন সোহেল। এরপর বিড়াল ফেরত দিতে দীপশেখর যান তাঁদের বাড়ি। পার্সিয়ান ক্যাট ফেরত দিয়ে চলে আসেন। গোল বাধে ঠিক তারপর।
পুলিশকে সোহেলবাবু জানিয়েছেন, বিড়ালটির আচার আচরণ দেখে সন্দেহ হয়। তারপর খুঁটিয়ে দেখে স্পষ্ট বোঝেন এ বিড়াল তাঁর বিড়াল নয়। এটি অন্য। দীপশেখর তাঁর চোখে ধুলো দিয়ে অন্য বিড়াল গছিয়ে দিয়ে কেটে পড়েছে। তিনি ওইদিন রাতেই ক্রেশে গিয়ে নিজের পোষ্যকে ফেরত চান। দীপশেখরকে দার্জিলিংয়ে থাকা স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তারপর চলে আসেন। কিন্তু তারপরও নিজের বিড়াল ফেরত পাননি। কোনও সমাধান না হওয়ায় ১০ তারিখ থানায় গিয়ে চুরি, বিশ্বাসভঙ্গ ইত্যাদি ধারায় অভিযোগ জানান। এদিকে দীপশেখরের অভিযোগ, ১১ অক্টোবর সোহেল লোকজন এনে ক্রেশে এসে হম্বিতম্বি করেন। ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। ১২ তারিখ দীপশেখরকে গ্রেফতার করে রিজেন্ট পার্ক থানা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরার মুখে অভিযুক্ত বলেছেন যে, একইরকম দেখতে একটি বিড়াল ৩০ সেপ্টেম্বর ক্রেশে এসেছিল। দুই বিড়ালের অদলবদল হয়ে যেতে পারে। পুলিশের বক্তব্য, ক্রেশে সে বিড়ালটির রেজিস্ট্রেশন হয়নি। বা কোনও কাগজপত্রও দাখিল করতে পারেনি ধৃত। দীপশেখরের আইনজীবী বিশ্বজিৎ মণ্ডল যদিও বলেছেন,‘অভিযোগকারী কিসের ভিত্তিতে দাবি করছেন এ বিড়াল তাঁর নয়।’ আর সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল বলেছেন,‘জিম্মায় রেখে যাওয়া বিড়াল হাওয়া হয়ে গেল কি করে তা তদন্তে জানা যাবে।’