• ৩০ বছর ধরে কমছে আলো, দূষণে নিস্তেজ সূর্যও!
    বর্তমান | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
  • নয়াদিল্লি ও নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘সূর্য বলল ইশ, আমি উঠলাম ভাগ্যিস, তাই রাত্তির হল ভোর’। কিন্তু সূয্যিমামা ওঠার পরও যদি তার আলো ‘উধাও’ হয়ে যায়! না, কোনও কল্পকাহিনি নয়। বিগত তিন দশক ধরে বাস্তবেই ভারতে কমতে শুরু করেছে সূর্যের আলো। নেপথ্যে বায়ুদূষণ। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজি এবং ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৩০ বছর ধরে ভারতের বেশিরভাগ অংশে ‘সানশাইন-আওয়ার’ বা সূর্যালোকের সময় দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এর কারণ ক্রমবর্ধমান এরোসল দূষণ ও ঘন মেঘ। গবেষণাটি চলতি মাসে নেচার’স সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

    দেশজুড়ে মোট ন’টি অঞ্চলে ২০টি আবহাওয়া দপ্তরের ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। আবহাওয়া দপ্তরের কেন্দ্রগুলি পূর্বাভাসের সঙ্গে স্থানীয় এলাকায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়ও দেয়। গবেষণার এই কাজে সেই তথ্যই বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই ‘সৌর ম্লান’ (সূর্যের আলো কমে যাওয়া) এরোসল কণার কারণে ঘটে। এরোসল হল কারখানার ধোঁয়া, জৈববস্তু ও জীবাশ্ম জ্বালানি (কাঠ এবং কয়লা) পোড়ানো এবং যানবাহন দূষণের ফলে নির্গত ক্ষুদ্র কণা। এই কণাগুলি মেঘের জন্য ‘বীজ’ হিসেবে কাজ করে। এগুলি দীর্ঘ সময়ের জন্য আকাশে ভেসে থাকে। এর সৌজন্যেই বেশি সময়ের জন্য মেঘাচ্ছন্ন থাকছে আকাশ। কমছে সূর্যালোক।

    গবেষণাটিতে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, বার্ষিক সূর্যালোকের সময় ভারতের সমস্ত অঞ্চলেই হ্রাস পেয়েছে। শুধুমাত্র উত্তর-পূর্ব ভারতে বর্ষার সময় কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা গিয়েছে। বিএইচইউ-এর বিজ্ঞানী মনোজ কে শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, পশ্চিম উপকূলে প্রতি বছর গড়ে ৮.৬ ঘণ্টা সূর্যালোকের সময় কমেছে। সবচেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে উত্তরের সমভূমিতে। এর পরিমাণ প্রতি বছর ১৩.১ ঘণ্টা। পূর্ব উপকূলে প্রতি বছর ৪.৯ ঘণ্টা কমেছে। দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে কমেছে বছরে ৩.১ ঘণ্টা। মধ্য ভারতে হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৪.৭ ঘণ্টা। গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে, অক্টোবর থেকে মে (শুষ্ক মাস) পর্যন্ত সূর্যালোক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু জুন থেকে সেপ্টেম্বর (বর্ষা) পর্যন্ত তা প্রচণ্ড পরিমাণে কমেছে। শ্রীবাস্তবের বক্তব্য, দূষণের ফলে এরোসল বেড়ে গিয়ে মেঘকে বায়ুমণ্ডলে দীর্ঘ সময় ধরে রাখে। এর ফলেই সূর্যের আলো মাটিতে পৌঁছতে বাধা পায়। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে কৃষিকাজের ক্ষেত্রে। কারণ কৃষিকাজের জন্য সূর্যের আলো জরুরি। পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণও এর ফলে ধাক্কা খেতে বাধ্য।

    এবিষয়ে পরিবেশবিদ এস এম ঘোষ বলেন, ‘গাছপালার মতো জৈব পদার্থ এবং কয়লা ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে এরোসল সৃষ্টি হয়। তাতে তরল ও কঠিন পদার্থের ভাসমান সূক্ষ্ম কণা থাকে। এরোসলের মাত্রা বাড়ার কারণে দূষণ বাড়ছে। বাতাসের জলীয় বাষ্পের সঙ্গে এটা ধোঁয়াশা জাতীয় মেঘলা পরিবেশ তৈরি করছে। এর ফলে সূর্যের আলো বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।’ যদিও সেকথা পুরোপুরি মানছেন না আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা হবিবুর রহমান বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘সান শাইনের সময় কমছে এটা কোন কোনও নির্দিষ্ট জায়গার ভিত্তিতে হতে পারে। কিন্তু এটা সাধারণ প্রবণতা নয়। সূর্য ওঠার সময় তো পাল্টায় না। সূর্যালোকের তীব্রতা হেরফের হতে পারে নানা কারণে। পশ্চিমবঙ্গে আবহাওয়া দপ্তরের সূর্যালোকের তীব্রতা পরিমাপ করার ব্যবস্থা রয়েছে একমাত্র দমদমে।’
  • Link to this news (বর্তমান)