রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়তেই উত্তাপ বাড়ছে রাজনীতির ময়দানে। দলগত উত্তাপ, ইস্যুভিত্তিক উত্তাপ এবং অবশ্যই এসআইআর। ইন্টেনসিভ রিভিশন। এই একটি বিষয় যে ভোটব্যাঙ্কে সূচ হয়ে ঢুকছে, তা নিয়ে সংশয় গোপন রাখছে না রাজ্যের শাসক মহল। সবচেয়ে বড় কথা, বিজেপি এই ভোটার তালিকা শুদ্ধকরণ নিয়েই মরিয়া হয়ে মাঠ ময়দান দাপানোর চেষ্টায় রয়েছে। তৃণমূলের অন্দরের বক্তব্য, এই ইস্যুতে নানাবিধ ঘুঁটি ব্যবহার করছে তারা। তার মধ্যে কি রয়েছে সমীক্ষক কিছু সংস্থাও? এই প্রশ্ন উঠছে। কারণ, বাংলার ভোটাররা ইদানীং এমনই কিছু সংস্থার ফোন পেতে শুরু করেছেন। তারা সরাসরি বিজেপিকে ভোট দেওয়ার কথা না বললেও তৃণমূলের বিধায়কদের কাজকর্মকে ছাঁকনির তলায় ফেলছে। পাশাপাশি প্রশ্নমালা সেজে উঠছে ব্যক্তিগত জানা-অজানা নিয়েও। আপনার কি কাস্ট সার্টিফিকেট বা জাতি শংসাপত্র রয়েছে? বাড়ি কি আপনার নিজের? দলিল আছে তো? ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় কি আপনার নাম ছিল? লক্ষ করার মতো বিষয় হল, এই প্রত্যেকটি প্রশ্নই এসআইআর সম্পর্কিত। অর্থাৎ, বিহারে ইন্টেনসিভ রিভিশনের সময় নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় নথির যে তালিকা প্রকাশ করেছিল, এই সবেরই উল্লেখ ছিল সেই বিজ্ঞপ্তিতে। আধার বা ভোটার কার্ড নিয়ে একটিও প্রশ্ন না করে অন্য নথি নিয়ে জিজ্ঞেস করাতেই সন্দেহ দানা বাঁধছে। তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করছে সাধারণ মানুষও।
৮০৬৫৯০৬৯১১। মূলত ফোন আসছে এই নম্বর থেকেই। আপনি কোন ভাষায় কথা বলতে স্বচ্ছন্দ? ভাঙা ভাঙা বাংলা মিশিয়ে হিন্দিতে প্রশ্ন। তারপরই প্রশ্ন, আপনি কি কলকাতার বাসিন্দা? না হলে কোন এলাকার? প্রাথমিক এই কয়েকটি ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই প্রশ্ন ধেয়ে আসছে, আপনার এলাকার বিধায়ক কেমন কাজ করছেন? তৃণমূলের তো? কোন কোন পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না? যাঁরা এমন ফোনের মুখে পড়েছেন, তাঁদের বক্তব্য, সরাসরি তৃণমূল বিরোধিতা নেই ঠিকই, কিন্তু আঁচ পাওয়াই যাচ্ছে। কমবেশি ‘সমীক্ষক’রা স্বীকার করে নিচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এবং তাঁর বিধায়করা কেমন কাজ করছেন, তা জরিপ করাই উদ্দেশ্য। এই পর্যন্তও অসুবিধা ছিল না। কিন্তু তারপরই শুরু হয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিগত প্রশ্ন। বাড়িতে কে কে আছেন? কতজন ভোটার? কী কী নথি রয়েছে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির সাফ প্রতিবাদ, ‘ব্যক্তিগত তথ্য ওদের জানাব কেন?’ বাংলার এমন অধিকাংশ নাগরিকই কিন্তু এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে নারাজ। সবচেয়ে বড় কথা, যে বেসরকারি সংস্থা থেকে ফোন আসছে, তাদের অফিসের ঠিকানা, ফোন নম্বর, সংস্থার প্রধানের নাম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে উত্তর দেওয়া হচ্ছে না। ফলে রহস্য বাড়ছে। কৃষ্ণেন্দু দত্ত রায় নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘সার্ভের নামে খুব বিরক্ত করছে। আমি থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।’ রোশনি সাহা, জয়া কর্মকার জানান, ‘খুবই বিরক্তিকর।’ রিচিক গঙ্গোপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন, ‘মার্কেট রিসার্চ কোম্পানির নাম করে ফোন। কোন দলকে আমি সাপোর্ট করি, সেটা পর্যন্ত জানতে চাওয়া হচ্ছে। কেন বলব?’
তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে বলছেন, ভোটের মুখে নানা ধরনের এজেন্সি নেমে পড়ে। ফলে আম জনতার উচিত, সার্ভে বা সমীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে ওই বেসরকারি এজেন্সি বা সংস্থার খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া। এবং অবশ্যই ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।