নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: চাঁদা আদায়ের নামে কারখানার শ্রমিকদের তালা বন্ধ করে আটকে রাখার অভিযোগ উঠল একটি পুজো কমিটির বিরুদ্ধে। কারখানার ম্যানেজারকে গালিগালাজ ও হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার লিলুয়ার জগদীশপুরে। স্থানীয় জগদীশপুর ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন কারখানার শ্রমিকরা। যদিও চাঁদা নিয়ে জুলুমবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
লিলুয়ার জগদীশপুরের দেবীরপাড়ায় রয়েছে নকুলদানা, মিছরি, আখের গুড় তৈরির ওই কারখানাটি। আগে এটি ঢালাই ঘর থাকলেও বর্তমানে চিনির সামগ্রী তৈরি হয় কারখানাটিতে। কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, শনিবার বিকেলে স্থানীয় জগদীশপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির তরফে চার যুবক সেখানে আসে। দুর্গাপুজোর আগেই ওই ক্লাবের লোকজন এসে নাকি দু’হাজার টাকার বিল কেটে দিয়ে গিয়েছিল। সেই টাকা সহ কালীপুজোর চাঁদা আদায় করতে এসেছিল ওই চারজন। দুর্গাপুজো ও কালীপুজো মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা চাওয়া হলে তা দিতে অস্বীকার করেন কারখানার ম্যানেজার শঙ্কর সাউ। সামর্থ্য অনুযায়ী তিনি চারশো টাকা চাঁদা দেবেন বলে জানান। অভিযোগ, এরপরেই পুজো কমিটির সদস্যরা শঙ্করবাবুকে ধাক্কাধাক্কি করে এবং তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও হুমকি দেয়। ঘটনার সময় কারখানার ভিতর প্রায় জনা পঞ্চাশেক শ্রমিক কাজ করছিলেন। ম্যানেজার সহ শ্রমিকদের কারখানার ভিতরে আটকে তালা বন্ধ করে দিয়ে চলে যায় যুবকরা। দীর্ঘক্ষণ কারখানার ভিতরেই আটকে থাকেন তাঁরা। খবর পেয়ে কারখানার মালিক অঞ্জলি কাঁড়ার স্থানীয় জগদীশপুর ফাঁড়িতে গিয়ে অভিযোগ জানান। এরপর পুলিশি হস্তক্ষেপে কারখানার তালা খোলা হয়।
ম্যানেজার শঙ্করবাবু বলেন, ‘প্রায় ২৯ বছর ধরে আমরা এই কারখানায় কাজ করছি। চাঁদা দিতে আমরা অস্বীকার করিনি। কিন্তু অত টাকা তো দেওয়া সম্ভব ছিল না।’ শ্রমিকদের অনেকেই বলেন, এর আগে চাঁদা নিয়ে জুলুমবাজির ঘটনা কখনও ঘটেনি। যেভাবে তাঁদের শাসানো হয়েছে, এরপর কাজে আসতে ভয় পাচ্ছেন শ্রমিকরা। কারখানার মালিক অঞ্জলি কাঁড়ার বলেন, ‘এভাবে শ্রমিকদের আটকে রেখে জুলুমবাজি করলে কারখানা চালানোই মুশকিল হবে।’ জগদীশপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির তরফে শুভ্র বসু রায়চৌধুরী বলেন, ‘এই ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ওই কারখানাটি গত তিন বছর ধরে পুজোর চাঁদা দেয় না। এবছর চাঁদা চাইতে গেলে ক্লাবের সদস্যদের বারবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তা নিয়ে সামান্য বচসা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি ক্লাবকে যা অনুদান দেন, তাতে চাঁদা নিয়ে কাউকে জোর করার প্রশ্নই ওঠে না।’ ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা। নিজস্ব চিত্র