বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের এক ডাক্তারি ছাত্রীকে ক্যাম্পাসের বাইরে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। রবিবার ধৃতদের দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁদের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, কলেজ থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব মাত্র ৭০০ মিটার। পাশেই রয়েছে ঝোপঝাড় ও নেশার ঠেক। ধৃতরা ওই ঠেকে অবস্থান করছিল। রাস্তা দিয়ে ছাত্রী ও তাঁর সহপাঠী যাচ্ছিলেন, তখনই তিনজন ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে জঙ্গলের দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে। এ সময় তাঁরা ছাত্রীর মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়, যা পরে উদ্ধার করা হয়।
তদন্তে জানা গিয়েছে, সহপাঠীটি পালিয়ে গেলে ধর্ষণকারীরা একা থাকা ছাত্রীকে জঙ্গলে নিয়ে যান। পুলিশ জানিয়েছে, সহপাঠী ও ধৃতদের মধ্যে একটি সংঘটিত অপরাধ পরিকল্পনার সূত্র পাওয়া গিয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তল্লাশি চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করেছে। ধৃতদের শনাক্ত করার জন্য আক্রান্ত ছাত্রী এবং তাঁর সহপাঠীর বয়ান নেওয়া হয়েছে।
ছাত্রীর বাবা অভিযোগ করেছেন, তাঁর মেয়ে সহপাঠীর সঙ্গে বেরিয়েছিলেন, যিনি তাঁকে ভুল বুঝিয়ে বাইরে নিয়ে গিয়েছিলেন। পুলিশের কাছে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে এমনই দাবি করেছেন ‘ধর্ষিতা’ তরুণীর বাবা। ধৃত তিনজন সেই সহপাঠীর বন্ধু বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে, ‘রাত ৮টা নাগাদ মেয়ের এক সহপাঠী এবং সেই সহপাঠীর কয়েকজন বন্ধু মিলে মেয়েকে বিভ্রান্ত করেছিল। তার পর মিথ্যা কথা বলে তাঁকে দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজের কাছে ফাঁকা রাস্তায় নিয়ে যায়।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, মেয়ের মোবাইল এবং পাঁচ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
‘নির্যাতিতা’র বাবা বলেন, ‘রাত ১০টায় ওর বন্ধু ফোন করে জানায়, আমার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ওর একটা বন্ধু ওকে খেতে নিয়ে গিয়েছিল বাইরে। কিন্তু যখন দু’-তিনজন ওকে ঘিরে ধরে, তখন ওর বন্ধুটি পালিয়ে যায় ওকে ছেড়ে। ঘটনাটা ঘটেছে রাত ৮-৯টার মধ্যে। এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। কোনও ব্যবস্থাই নেই এখানে।’
কলেজ কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, রাত ৭টা ৫৮ মিনিটে ওই ছাত্রী সহপাঠীর সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে বের হন। ৮টা ৪২ মিনিটে সহপাঠী একা ফিরে আসেন। ৯টা ২৯ মিনিটে ছাত্রী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন এবং ৯টা ৩১ মিনিটে হস্টেলের দিকে যান।
এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ছাত্রীকে নিরাপদে ওড়িশায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর বাবা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝীর কাছে অনুরোধও করেছেন। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। ‘নির্যাতিতা’র বাবা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছি, যাতে মেয়েকে এখান থেকে ওড়িশায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এই জায়গার উপর থেকে ভরসা উঠে গিয়েছে। ওকে মেরেও ফেলতে পারে।’
পুলিশের তল্লাশি অভিযান ও তদন্ত এখনও চলছে, যাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত করা যায়। এদিকে পুলিশ সূত্রের দাবি, সহপাঠীকে পালিয়ে যেতে দেখে তরুণী তাঁর কলেজের বন্ধুদের ফোনও করেছিলেন। তারপর ওই বন্ধুরাই ‘নির্যাতিতা’র সহপাঠীকে আবার ঘটনাস্থলে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ সবের মাঝেই ‘নির্যাতিতা’কে ধর্ষণ করে বলে প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই পুলিশ সহপাঠীকে ‘আটক’ করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। তাঁর বয়ানে এ কথা জানা গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পাশাপাশি, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট রঞ্জনা রায়ও তরুণীর সঙ্গে কথা বলেছেন।