• 'জাত-ধর্ম মানি না, মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই!' জুবিনের শেষকৃত্যে ক্যামেরার সামনে পৈতে ছিঁড়ে পণ যুবকের...
    আজকাল | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: গায়কের শেষকৃত্যের আসরে এক নজিরবিহীন কাণ্ড। শিল্পী জুবিন গার্গের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ক্যামেরার সামনেই নিজের পৈতে ছিঁড়ে ফেললেন এক যুবক। তাঁর ঘোষণা, এ বার থেকে তিনি শুধু মানুষ হিসাবেই বাঁচবেন, কোনও জাতি বা ধর্মের পরিচয় নিয়ে নয়।

    বছর ত্রিশের ওই যুবকের নাম সুন ভগবতী। তিনি জানিয়েছেন, নিজের আদর্শ জুবিনের দেখানো পথেই হেঁটেছেন তিনি। জুবিন নিজেও বারবার নিজেকে শুধু 'মানুষ' বলতেন এবং জাতি-ধর্মের পরিচয়কে অস্বীকার করতেন।

    ক্যামেরার সামনে পৈতে ছিঁড়ে ভগবতী বলেন, "জন্মসূত্রে আমি ব্রাহ্মণ। কিন্তু আমার কোনও জাত নেই, ধর্ম নেই। আমাদের মানুষ হয়ে বাঁচতে হবে। তাই আজ এটা ছিঁড়ে ফেললাম।" এর পরেই সুতোটি একটি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে তিনি যোগ করেন, "মানুষের শুধু মানুষ হিসাবেই বাঁচা উচিত, হিন্দু-মুসলমান হিসাবে নয়। জয় জুবিন দা। আমি এটা আর কোনও দিন পরব না।"

    ভগবতী জানান, সমাজে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজনের বিরুদ্ধেই তাঁর এই পদক্ষেপ। তিনি বলেন, "গত কয়েক বছর ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধু হিন্দু-মুসলমান বিতর্কই দেখছি। এমনকী, হিন্দুধর্মের মধ্যেও জাতপাত মানুষকে বিভক্ত করে। আমি আর ওই হাজারো নিয়মকানুন, বিধিনিষেধ মানতে চাই না।" তিনি এ-ও স্পষ্ট করে দেন যে, তাঁর ছয় বছরের ছেলের ক্ষেত্রেও এই প্রথা তিনি আর চালাবেন না। তাঁর কথায়, "আমি ওকে কখনও পৈতে দেব না। মানবতাই সবকিছুর ঊর্ধ্বে। ধর্ম দিয়ে নয়, শিক্ষার মাধ্যমেই আমাদের সকলের দেশ গঠনে অবদান রাখা উচিত।"

    প্রসঙ্গত, জুবিন গার্গ নিজেও জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান। তাঁর আসল নাম জীবন বরঠাকুর। কিন্তু তিনিও বরাবর জাতি-ধর্মের পরিচয় অস্বীকার করে এসেছেন। একাধিক বার তিনি নিজেই বলেছিলেন যে, এক সময় নিজের পৈতেকে দড়ি হিসাবে ব্যবহার করে মশারি টাঙিয়েছিলেন।

    ভগবতীর এই ভিডিওটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এবং নেটদুনিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই জাতি-ধর্মের এই প্রতীকী প্রত্যাখ্যানকে স্বাগত জানালেও, অনেকে এর সমালোচনাও করেন।

    অসমের মন্ত্রী পীযূষ হাজারিকা এই ঘটনার নিন্দা করে এটিকে 'সনাতন ঐতিহ্যের পরিপন্থী' বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, "ক্যামেরার সামনে প্রকাশ্যে কারও নিজের পৈতে ছিঁড়ে ফেলার তীব্র বিরোধিতা করছি আমি। এটা আমাদের ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে। এই ধরনের কাজ সমাজে যেন কোনও নেতিবাচক বার্তা না পাঠায়।" তবে একই সঙ্গে মন্ত্রী এ-ও মনে করিয়ে দেন যে, জুবিন গার্গ এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে সব মানুষ মিলেমিশে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করবেন।

    উল্লেখ্য, অসমের অন্যতম সেরা সাংস্কৃতিক আইকন জুবিন গার্গ গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে প্রয়াত হন। সেখানকার উত্তর-পূর্ব ভারত উৎসবের চতুর্থ সংস্করণে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময় জলে ডুবে মৃত্যু হয় তাঁর। এই গায়ক, সুরকার এবং অভিনেতার মৃত্যুতে উত্তর-পূর্ব ভারত-সহ দেশের অগণিত অনুরাগী শোকস্তব্ধ। নিজের সঙ্গীতের মাধ্যমে তিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে একসুরে বেঁধেছিলেন।
  • Link to this news (আজকাল)