অত রাতে কী ভাবে ক্যাম্পাসের বাইরে ছাত্রী? দুর্গাপুরকাণ্ডে প্রশ্ন মমতার, কড়া ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়ে টানলেন ওড়িশার তুলনাও
আনন্দবাজার | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
দুর্গাপুরে মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াকে ‘গণধর্ষণে’র অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। এ বার এই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই ঘটনায় পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলেছেন তিনি। ‘গণধর্ষণে’র অভিযোগে ইতিমধ্যেই তিন জন গ্রেফতার হয়েছেন বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে কী ভাবে ওই পড়ুয়া রাতে বাইরে বেরোলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, “বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজেরও একটা দায়িত্ব আছে। তাদের স্টুডেন্টদের দেখভাল (টেক কেয়ার) করার।”
রবিবার দুর্গাপুরের ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্নের প্রেক্ষিতে রাত সাড়ে ১২টায় ওই ছাত্রীর ক্যাম্পাসের বাইরে বেরোনো নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। বলেন, “বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির উচিত পড়ুয়াদের, বিশেষত ছোট মেয়েদের রাতে বাইরে বেরোতে না-দেওয়া। তাদের নিজেদেরও সুরক্ষিত থাকতে হবে।” মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেন যে, “বিভিন্ন রাজ্যের যে সমস্ত ছেলেমেয়ে পড়তে আসেন, তাঁদেরও আমি অনুরোধ করব, রাত্রিবেলা না-বেরোতে। কারণ, পুলিশ তো জানতে পারে না, কে কখন রাতে বেরিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজেরও একটা দায়িত্ব আছে। পুলিশ তো বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বসে থাকবে না।কেউ যদি রাত সাড়ে ১২টায় বেরিয়ে কোথাও যায়... ঘটনাটা নিন্দনীয়। আমি ঘটনাটাকে সমর্থন করছি না। যে যেখানে খুশি যেতে পারে। সেটা তার অধিকার। কিন্তু যারা হস্টেলে থাকে, তাদের একটা নিয়ম (সিস্টেম) আছে।” দুর্গাপুরের ঘটনায় অভিযুক্তদের কাউকে ছাড়া হবে না বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘কী ভাবে রাত সাড়ে ১২টায় বেরোল? আমরা দু’-তিন মাসে চার্জশিট দিয়ে থাকি। নিম্ন আদালত ফাঁসির সাজা দেয়।’’ দুর্গাপুরের ‘নির্যাতিতা’ আদতে ওড়িশার জলেশ্বরের বাসিন্দা। শনিবার সন্ধ্যায় সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে বিজেপিশাসিত ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝী মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান। রবিবার ওড়িশায় মেয়েদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেই প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “তিন সপ্তাহ আগে ওড়িশায় সমুদ্রসৈকতে তিনটি মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় ওড়িশা সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? বাংলায় কিছু হলে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিই।” মণিপুর, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশায় নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওই জায়গাগুলোয় এগুলো ঘটলে ওরা (বিজেপি) গুরুত্ব দেয় না। সেখানে ধর্ষিতা আদালতে যাওয়ার আগেই রাস্তায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আমরা কোনও ঘটনাকেই সমর্থন করি না। আমরা এই সমস্ত ঘটনাকে রেয়াত করি না।”
মুখ্যমন্ত্রীর মেয়েদের এই বাইরে বেরোতে না-দেওয়া সংক্রান্ত মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে তিনি লেখেন, “রাজ্যের মহিলারা যেখানে নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের আশায় সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ঘরবন্দি থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন যা সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “এই মন্তব্য প্রমাণ করে, তৃণমূল সরকারের নারীর নিরাপত্তা নিয়ে কোনও দায়বদ্ধতা নেই।”
দুর্গাপুরের শোভাপুর এলাকায় একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী ‘নির্যাতিতা’ ওই তরুণী। শুক্রবার রাতে এক সহপাঠীর সঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেখানে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কয়েক জন যুবক ক্যাম্পাসের বাইরে তরুণীকে হেনস্থা করেন প্রথমে। তার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয়। ঘটনার তদন্তে নেমে রাতেই তরুণীর সহপাঠীকে আটক করে পুলিশ। তাঁর বয়ানের সত্যাসত্য যাচাইয়ের চেষ্টা চলছে। গভীর রাতে আরও তিন জনকে আটক করা হয়েছে। পরে সকালে ওই তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সহপাঠী এখনও আটক। সূত্রের খবর, আরও কয়েক জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।