দুর্গাপুরের ঘটনায় গ্রেফতার পুরনিগমের অস্থায়ী কর্মী! ধৃত বেড়ে চার, খোঁজ চলছে শেষ অভিযুক্তের, সহপাঠী আটক
আনন্দবাজার | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
দুর্গাপুরে ওড়িশার ডাক্তারি ছাত্রীকে ‘গণধর্ষণের’ ঘটনায় দুর্গাপুর পুরনিগমের অস্থায়ী এক কর্মীকেও গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হল চার জন। রবিবার তিন জনকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। রাতে আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। সূত্রের খবর, তিনি দুর্গাপুুর পুরনিগমের সঙ্গে যুক্ত। সোমবার তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হবে। এখনও পর্যন্ত এক অভিযুক্তের খোঁজ মেলেনি। পুলিশ তাঁর খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে।
দুর্গাপুরের ঘটনায় ধৃতদের সকলেরই ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। পুলিশ তার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখনও আটক রয়েছেন অভিযোগকারী তরুণীর বন্ধু-সহপাঠী। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তের পাশাপাশি নিরাপত্তার স্বার্থেও ওই যুবককে আটক রাখা হয়েছে। অভিযোগপত্রে মোট পাঁচ জনের নাম লিখেছিলেন তরুণী। তাঁদের মধ্যে চার জন ধরা পড়েছেন।
দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অভিযোগকারী তরুণী। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে আছেন। ওড়িশা থেকে চলে এসেছেন তাঁর বাবা-মাও। ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তরুণীর বাবা রবিবার জানান, পশ্চিমবঙ্গে তিনি সুরক্ষিত বোধ করছেন না। কন্যাকে নিয়ে ওড়িশায় চলে যেতে চান। ইতিমধ্যে গোটা ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। বিজেপি দুর্গাপুরে একটি ধর্নামঞ্চ প্রস্তুত করেছে। সোমবার যাচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি দোষীদের শাস্তির দাবিতে ধর্নায় বসবেন। হাসপাতালে গিয়ে দেখা করবেন অভিযোগকারিণী এবং তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে।
পশ্চিম বর্ধমান তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘প্রথম দিন থেকে আমাদের জেলার দুই মন্ত্রী মলয় ঘটক এবং প্রদীপ মজুমদার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। পুলিশ সঠিক সময়ে তৎপরতার সঙ্গে পদক্ষেপ করেছে বলেই অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হয়েছেন।’’ রবিবার উত্তরবঙ্গে যাওয়ার পথে দুর্গাপুরকাণ্ড নিয়ে মুখ খুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেও তিনি জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষের সতর্ক থাকা উচিত ছিল। বাইরে থেকে যাঁরা এ রাজ্যে পড়তে আসেন, তাঁদের রাতে ক্যাম্পাসের বাইরে না বেরোনোর পরামর্শও দেন মমতা। বলেন, ‘‘বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির উচিত পড়ুয়াদের, বিশেষত ছোট মেয়েদের রাতে বাইরে বেরোতে না-দেওয়া। তাদের নিজেদেরও সুরক্ষিত থাকতে হবে। বিভিন্ন রাজ্যের যে ছেলেমেয়েরা পড়তে আসেন, তাঁদেরও আমি অনুরোধ করব, রাত্রিবেলা না-বেরোতে। কারণ, পুলিশ তো জানতে পারে না, কে কখন বেরিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ তো বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বসে থাকবে না।’’ অভিযুক্তদের কাউকে ছাড়া হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
ও়ড়িশা থেকে একটি প্রতিনিধিদল রবিবার দুর্গাপুরে এসেছিল। তাদের হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। সোমবার ওড়িশা থেকে মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা দুর্গাপুরে আসবেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তাঁরা ওড়িশা সরকারকে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেবেন। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝী দুর্গাপুরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।