অতি ভারী বৃষ্টির জেরে সম্প্রতি জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশ। উপচে পড়েছিল শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া খালগুলি। ওই সমস্ত খালের নাব্যতা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ যে খালপাড়ে দখলদারদের বসতি স্থাপন, তা মেনে নিয়েছিল সেচ দফতরও। কিন্তু তার পরেও অবশ্য খালপাড় দখলমুক্ত করার কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বদলে বেআইনি দখলদারদের মধ্যে খাল নিয়ে সচেতনতা তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল রাজ্য সরকার তথা সেচ দফতর।
কিন্তু সেই সচেতনতা তৈরির উদ্যোগও এখনও পর্যন্ত তেমন ভাবে কোথাও দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। সম্প্রতি ই এম বাইপাসের কাছে ডিডি-১ (পূর্ব) খালের ধারে গিয়ে দেখা গেল, খালপাড় তো বটেই, পুরসভার রাস্তাও অতি সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে দখলদারদের বসতির জেরে। সেই রাস্তা এতটাই অপ্রশস্ত যে, একটি গাড়িও স্বাভাবিক গতিতে যেতে পারে না। রুবি মোড়ের পাসপোর্ট দফতরের একটু দূরেই রয়েছে ওই খাল।
খালটির ভয়াবহ দুরবস্থা দেখলে প্রশ্ন উঠবে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েই। খালের আশপাশে আবর্জনা ফেলার কোনও জায়গা চোখে পড়েনি। থার্মোকল, প্লাস্টিক, বস্তা, ভাঙা বোতলের স্তূপ-সহ সব রকম আবর্জনাই ফেলা হচ্ছে খালের মধ্যে। খালের নাব্যতার দফারফা করে দিয়েছে জমে থাকা সেই জঞ্জাল। সেই সঙ্গেই রয়েছে খালধারের একাংশে দখলদারদের তৈরি করা ঘর ও শৌচাগার। সেই সমস্ত শৌচাগার থেকেও অনবরত দূষণ ছড়াচ্ছে খালে।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খালের এমন নারকীয় পরিবেশে কাজ করার মতো শ্রমিক পাওয়া যায় না। ওই পাঁক-জলে নেমে খালের আবর্জনা পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রায়ই ভাঙা বোতলের কাচের টুকরোয় জখম হন শ্রমিকেরা। খালের দু’পাশ এতটাই সঙ্কীর্ণ যে, যন্ত্রের মাধ্যমে খালের পলি পরিষ্কার করা দুরূহ ব্যাপার। সেই সঙ্গে আবর্জনা এবং বিষ্ঠা জমে থাকার সমস্যা তো রয়েছেই। খালের এমন ভয়াবহ অবস্থা সত্ত্বেও সেখানে খালের জল নোংরা না করার কোনও সতর্কবার্তা চোখে পড়ল না। এমনকি, পুরসভার তরফে বসানো হয়নি আবর্জনা ফেলার কোনও পাত্রও। এই দূষণের কারণেই ওই খালের জল ব্যবহারযোগ্য নয় বলে জানা গিয়েছে।
খালপাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মজে যাওয়া ওই খাল থেকে সর্বক্ষণই প্রবল দুর্গন্ধ ছড়ায়। সেই সঙ্গে রয়েছে মশার উপদ্রবও। কলকাতায় ডেঙ্গির প্রকোপ এখন ভাল মতোই চলছে। খালের আশপাশে ঘুরে দেখা গেল, কোনও কোনও অংশে কচুরিপানার জঙ্গল পুরু হয়ে খালে জমে রয়েছে। পলির পুরু স্তরের উপর দিয়ে ক্ষীণ ধারায় বয়ে যাচ্ছে জল। যদিও খালপাড়ের বাসিন্দারা দাবি করলেন, তাঁরা খালে কিছু ফেলেন না। তাঁদের বক্তব্য, শহরে এসে রোজগারের জন্য তাঁরা বহু বছর ধরে ওই জায়গায় রয়েছেন। তাঁদের অন্যত্র যাওয়ার উপায় নেই।
পূর্ব কলকাতার আনন্দপুর ও কসবার বিস্তীর্ণ অংশের বর্জ্য জল ওই খালের মধ্যে দিয়ে গিয়ে বিদ্যাধরী নদীতে পড়ে। ওই খাল আবার টালিগঞ্জ-পঞ্চান্নগ্রাম (টিপি) খালের সঙ্গেও যুক্ত। টিপি খালের মাধ্যমে যাদবপুর এলাকার বিস্তীর্ণ অংশের বর্জ্য জল ডিডি-১ খাল এবং আনন্দপুরের কাছে ইন্টারসেপ্টিং খালের মাধ্যমে বিদ্যাধরীতে গিয়ে পড়ছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ খালের এ হেন শোচনীয় পরিস্থিতি অনেক প্রশ্ন তুলে দেয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রায় এক দশক আগে খালটি কাটা হয়েছিল।
সেচ দফতর অবশ্য মেনে নিয়েছে যে, খালটির এখন বেহাল দশা। বেআইনি দখলদারদের কারণে ওই জায়গায় খাল কেটে, পলি তুলে সংস্কারের কাজ করতে সময় লাগবে বলেই জানিয়েছে তারা। দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘সংস্কারের কাজের জন্য খালপাড়ের বাসিন্দাদের সাময়িক ভাবে অন্যত্র সরাতে পুরসভার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে, বর্জ্য সরানোর কাজ কিন্তু নির্দিষ্ট সময় অন্তর করা হয়। খালটি অন্য দিক থেকে কাটা শুরু হয়েছে। ওই অংশেও কাটা হবে।’’