• বুথে কার কেমন হাল, দেখিয়ে দিচ্ছে এসআইআর
    আনন্দবাজার | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
  • যে কোনও দিন বঙ্গে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়ে যাবে ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া শুরুর। তার আগেই ওই প্রক্রিয়া ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ প্রবল। কিন্তু বুথে বুথে যেখানে ভোটার তালিকায় অনিয়ম বা ‘কারচুপি’ ধরতে হবে, সেখানে বিরোধী শিবিরের লোকবল নিয়ে ঘোরতর সংশয় থেকেই যাচ্ছে! রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশের মতে, বিহারের অভিজ্ঞতারই বাংলায় পুনরাবৃত্তি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা!

    এসআইআর-এর জন্য রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃত্ব বিধানসভা কেন্দ্র ধরে বুথ লেভল এজেন্ট (বিএলএ-১) নিয়োগ করবেন। সেই বিলএ-১ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্তেরা আবার নিজেদের এলাকায় বুথ পিছু বিএলএ-২ ঠিক করবেন। এসআইআরপ-এর সময়ে কোন দল কত বিএলএ দিতে পারল, তার তালিকা নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করে দেবে। ভোটের সময়ে বিরোধীরা যে ভাবে বুথে এজেন্ট বসতে না দেওয়া বা বার করে দেওয়ার অভিযোগ করে, এখানে সে সুযোগ নেই। তৃণমূল স্তরে কার কত লোকবল, সেই পরীক্ষা নেবে কমিশনই! যেমন নেওয়া হয়েছে বিহারে। বাংলায় এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া কোনও দলই সব বুথে প্রতিনিধি দেওয়ার জায়গায় নেই। মুখে এসআইআর নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধিতা ও নানা হুঙ্কার দিলেও তৃণমূল দলীয় স্তরে বিএলএ তালিকা তৈরি রাখার কাজ সেরে নিচ্ছে। বুথে বুথে ‘বৈধ’ ভোটারের নাম কাটা যাচ্ছে কি না, সে দিকে সকর্ক নজর রাখার জন্য সাংগঠনিক দায়িত্ব দলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

    বিহারে এত দিন বুথের সংখ্যা ছিল ৭৭ হাজার ৮৯৫। কোনও বুথে ১২০০-র বেশি ভোটার থাকবে না, এই নীতি মেনে ভোটের সময়ে বিহারে বুথের সংখ্যা বেড়ে হচ্ছে ৯০ হাজার ৭১২। নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, এসআইআর প্রক্রিয়া চলাকালীন বিহারের দুই প্রধান শাসক দল বিজেপি ৫৩ হাজার ৩৩৮ জন এবং জেডিইউ ৩৬ হাজার ৫৬০ জন বিএলএ দিয়েছিল। এনডিএ জোটের মধ্যে বুথভিত্তিক দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ ছিল তাদের। একই ভাবে বিরোধী জোটের শরিকদের মধ্যে আরজেডি ৪৭ হাজার ৫০৬, কংগ্রেস ১৭ হাজার ৫৪৯ এবং সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন ১৪৯৬ জন বিএলএ দিয়েছিল। কিন্তু তার পরে কী দেখা গিয়েছে? এসআইআর প্রক্রিয়ায় খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছিল প্রায় ৬৫ লক্ষ নাম। বিস্তর বেনিয়মের অভিযোগ করলেও একমাত্র লিবারেশন দারভাঙা ও জেহনাবাদ জেলার কিছু উদাহরণ দেওয়া ছাড়া কোনও বিরোধী দলই এলাকাভিত্তিক নাম বাদ যাওয়া বা অন্তর্ভুক্তিতে গোলমালের বিশদ তথ্য দিতে পারেনি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কমিশন ওই ৬৫ লক্ষের নামের তালিকা প্রকাশ করেছিল। এর পরে চূড়ান্ত তালিকায় যখন খসড়া থেকে আরও তিন লক্ষ ৬৬ হাজার নাম বাদ গিয়েছে, তখনও তৃণমূল স্তরের সবিস্তার দৃষ্টান্ত তাদের অভিযোগের পক্ষে পেশ করতে পারেনি বিরোধীরা। সর্বোচ্চ আদালতেও এই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণকে। সুপ্রিম কোর্টই শেষ পর্যন্ত কমিশনকে ওই তিন লক্ষ ৬৬ হাজার ভোটারের বিষয়ে তথ্য দিতে বলেছে। অর্থাৎ কমিশনের উপরেই ঘুরিয়ে নির্ভর করতে হয়েছে বিরোধীদের!

    বাংলায় এসআইআর শুরুর আগে এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি প্রায় ৭০% বুথে প্রতিনিধি দিতে পারবে। বুথে লোক না-থাকার ঘাটতি পূরণে তারা অনলাইন প্রক্রিয়া এবং অ্যাপের দিকে নজর দিচ্ছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত কিছু এলাকা বাদে তাঁদের দল বিএলএ নিয়ে তৈরি আছে। সিপিএম সূত্রের খবর, তাদের বিএলএ থাকতে পারে সব মিলিয়ে ৫০% বুথে। কিছু জেলায় সংখ্যাটা ৭০-৭৫% পৌঁছচ্ছে, আবার কিছু জেলায় ওই অনুপাত খুবই কম। প্রদেশ কংগ্রেস আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সব জেলা থেকে বিএলএ-২’দের নাম চেয়েছে। তারাও সব মিলিয়ে ৪০% বুথে প্রতিনিধি দিতে পারবে কি না, দলের অন্দরেই সংশয় আছে। প্রসঙ্গত, এ রাজ্যে মোট বুথ সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার ৬৮১টি। প্রস্তাবিত নতুন বিন্যাসে রাজ্যে মোট বুথ হচ্ছে ৯৪ হাজার ৪৯৭।

    বরাবর সংগঠন ও বুথ স্তরে জোর দিয়ে আসা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য মানছেন, ‘‘একেবারে নিচু তলায়, বুথ স্তরে গিয়ে কাজ করার প্রবণতা ও ইচ্ছা সর্বত্রই কমছে। শাসক দল হলে আলাদা কথা, তখন কিছু বাড়তি সুবিধা থাকে।’’ লোকবল ছাড়া বাংলায় এসআইআর-পরীক্ষার মোকাবিলা বিরোধীরা কী ভাবে করবে, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)