কলকাতা পুরসভার লাইসেন্স বিভাগ যেন নেই-রাজ্য। ইনস্পেক্টর থাকার কথা ৪৯ জন, আদতে আছেন ২৫ জন। অর্থাৎ, অর্ধেক। সাবইনস্পেক্টর আছেন ৪০ জন, এ দিকে শূন্যপদ ৭০! অ্যাসিস্ট্যান্ট লাইসেন্স অফিসার পদে ২২ জন থাকার কথা, আছেন ২০ জন।
এর দীর্ঘমেয়াদি ফল পড়ছে পুরসভার রাজস্ব খাতে। অনলাইনে জমা হওয়া তথ্য সরেজমিন যাচাইয়ের প্রক্রিয়া এক প্রকার মুলতুবি রাখায় এই রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে।
কলকাতা পুর এলাকায় দোকান বা ব্যবসা সংক্রান্ত লাইসেন্স পেতে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। তার উপর নির্ভর করেই সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর লাইসেন্স মঞ্জুর করে পুরসভার লাইসেন্সবিভাগ। তবে অনলাইনে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময়ে যথাযথ নথি দেওয়া হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে তার আগে সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় পরির্দশনে যাওয়ার কথাপুরসভার। লাইসেন্স বিভাগ সূত্রের খবর, নিয়ম থাকা সত্ত্বেও আবেদনপত্র অনলাইনে জমা দেওয়ার পরেব্যবসার ঠিকানায় পরিদর্শনে যেতে পারছেন না পুরসভার সংশ্লিষ্টবিভাগের আধিকারিকেরা। ওই বিভাগেরই এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, ‘‘লোকবল না থাকায় এই সমস্যা হচ্ছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তবেই সেখানে গিয়ে দেখা হয়।’’
প্রশ্ন, এ ভাবে দিনের পর দিন আবেদনকারীর অনলাইনে জমানথির উপরে ‘ভরসা’ রাখাটা আদৌ কি ঠিক? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিভাগীয় আধিকারিকের কথায়, ‘‘এমন অনেক ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা অনলাইনে আবেদন করার পদ্ধতির বিশেষ সুবিধা নিচ্ছেন। আদতে তিনি যে ব্যবসা করছেন, তার নথি না দিয়ে অন্য তথ্য দিচ্ছেন। ধরা যাক, আবেদনকারী ২০০ বর্গফুটজায়গায় ব্যবসা করছেন। কিন্তু অনলাইনে আবেদনের সময়ে লিখছেন, ১০০ বর্গফুট। ফলে পুর রাজস্ব আদায় কমছে।’’
লাইসেন্স বিভাগের অন্য এক আধিকারিকেরও বক্তব্য, ‘‘লোকবল না থাকায় অনলাইন তথ্যের যথার্থতা যাচাই করে দেখা হচ্ছেনা। আবেদনকারী নিজের ব্যবসার সুবিধা পেতে মিথ্যা তথ্য দিতেই পারেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ জমা না পড়লেদিনের পর দিন তিনি সে ভাবেই ব্যবসা করে যাচ্ছেন। আর পুরসভার রাজস্ব আদায় কমছে।’’
পুরসভার লাইসেন্স বিভাগের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ড। অসংখ্য ব্যবসা সংক্রান্ত লাইসেন্সের আবেদন অনলাইনে জমা পড়ে। পাহাড়সমান লাইসেন্সের আবেদন খতিয়ে দেখতে যা লোকবল থাকার কথা, তার বিন্দুমাত্র নেই। পুরসভার পার্সোনেল বিভাগের এক আধিকারিকের যুক্তি, ‘‘ইনস্পেক্টর পদে অনেকের পদোন্নতি হবে শীঘ্রই। তা হলে শূন্যপদের ঘাটতি পূরণ হবে।’’