৭২ ঘন্টা অফিসের পর বাড়ি ফিরতেই স্বামীর ওপর 'ঝাঁপিয়ে' পড়ল স্ত্রী! ক্লান্ত স্বামীর সঙ্গে জোর করেই শুরু করে দিল...
আজকাল | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা এখন আর নতুন নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই প্রসঙ্গ সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। কর্মীদের মানসিক সুস্থতা, পারিবারিক সম্পর্ক ও সংস্থার সামগ্রিক উৎপাদনশীলতার উপর কাজের চাপের প্রভাব নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও আবারও নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে—বিষয়, ‘টক্সিক’ বা বিষাক্ত কর্মসংস্কৃতি, পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং পেশাগত দায়িত্ব ও পারিবারিক জীবনের সংবেদনশীল ভারসাম্য।
ভিডিওটি প্রথমে ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছিল। সেখানে দেখা যায়, এক ক্লান্ত মানুষ নিজের বাড়িতে ফেরার পর স্ত্রী সঙ্গে তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন। জানা গেছে, ওই ব্যক্তি টানা ৭২ ঘণ্টা কাজ করার পর বাড়ি ফিরেছিলেন। স্ত্রী ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং বলেন, “আ গয়ে, ১৬ ঘন্টা ঘরে দিজিয়েগা, ৭২ ঘন্টা রেল কো দিজিয়েগা… পুরা দিন কা ঘর কা কাম হাম হি করতে রহে।” তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল, স্বামীর দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে একদিকে পারিবারিক দায়িত্ব একার কাঁধে এসে পড়েছে, অন্যদিকে তিনি মনে করছেন, কর্মক্ষেত্র পরিবারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
পুরুষটি ভিডিও জুড়ে চুপচাপ বসে থাকেন, মুখে কোনও উত্তর দেন না। তাঁর মুখের ক্লান্তি ও শরীরের অবসাদই যেন অনেক কিছু বলে দেয়। দর্শকদের অনেকে লিখেছেন, ওই নীরবতা আসলে পরাজয়ের প্রতীক—যেন অনেকবার এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে তিনি এখন আর তর্ক করতে চান না।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। কেউ কেউ ওই মানুষটির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে বলেছেন, “চোখে দেখুন ক্লান্তি, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কতটা চাপে আছেন।” আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “ওর চুপ থাকা প্রমাণ করে এটা প্রথমবার নয়, আগেও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে।”
একাধিক ব্যবহারকারী মনে করেছেন, দু’জনের দিকই বোঝা দরকার—পুরুষটির বিশ্রাম প্রয়োজন, আবার পরিবারেরও প্রয়োজন তাঁর উপস্থিতি। কেউ কেউ স্ত্রীর আচরণ নিয়ে সমালোচনাও করেছেন। একজন লিখেছেন, “রাগটা ঠিক আছে, কিন্তু অন্তত ওকে একটু বিশ্রাম নিতে দিন, জলের গ্লাসটা দিন, জামা বদলাতে দিন—তারপর কথা বলুন।”
তবে কিছুজন স্ত্রীর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তাঁদের মতে, তাঁর রাগ স্বামীর কল্যাণের জন্যই। “সে চেঁচাচ্ছে কারণ সে চায় স্বামী বুঝুক, এই কাজের ধারা ওর জীবনটাই কেড়ে নিচ্ছে,” এমন মন্তব্যও দেখা গেছে। কেউ কেউ বলেছেন, “এটা কাজের জায়গার শোষণ, পরিবারকে সময় দিতে পারছে না—এটাই আসল সমস্যা।”
অন্যদিকে অনেকেই বলেছেন, “এভাবে একজন ক্লান্ত মানুষকে ধমকানোটা অত্যন্ত নির্মম। আগে একটু সহানুভূতি দেখানো উচিত ছিল।”
ভিডিওটি এখন এক বৃহত্তর সামাজিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে—বিশেষত সেই সব পেশায় যেখানে দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, অনিয়মিত শিফট এবং নিরন্তর চাপ একটি স্বাভাবিক বাস্তবতা। এ ঘটনাটি দেখিয়ে দিচ্ছে, কর্মক্ষেত্রের বাড়তি চাপ কেবল ব্যক্তির নয়, গোটা পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের ভারসাম্যকেও নষ্ট করছে। সমাজে এখন প্রশ্ন উঠছে—উৎপাদনশীলতার নামে মানুষ কতটা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, আর সেই ক্লান্তির ভার পরিবার কতদিন পর্যন্ত বইতে পারবে?