শুল্ক-হুমকি দিয়েই শান্তি আনছেন? ভারত-পাক যুদ্ধ থামাতেই নাকি নয়া স্ট্র্যাটেজি ট্রাম্পের, নোবেল না পেয়ে শেষমেশ ফাঁস করে দিলেন সব?...
আজকাল | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগেও বহুবার দাবি করেছেন, ভারত-পাক সংঘর্ষ থামিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, মোট আটটি যুদ্ধ থামিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি। এই দাবি যদিও নতুন নয়, আগেও বারে বারে করেছেন। একাধিক যুদ্ধ থামানোর কথা বলে, তিনি আশা করেছিলেন, নানা জায়গায় শান্তি এনে, এবার শান্তির জন্য নোবেলটাও পেয়ে যাবেন। যদিও তা হয়নি। ট্রাম্প এবার শান্তিতে নোবেল পাননি।
কিন্তু নোবেল না পেলেও, তিনি তাঁর দাবি থেকে সরে আসেননি। উলটে আরও বড় দাবি। এবার দাবি করেছেন, ভারত-পাক যুদ্ধ থামানোর জন্য তিনি নাকি বিরাট শুল্ক হুমকি দিয়েছিলেন। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, শুল্ক হুমকি দিয়েই নাকি তিনি বহু দেশের যুদ্ধ থামিয়েছেন। সেখানেই ট্রাম্প বলেন, তিনি ভারত-পাক দুই দেশকেই নাকি হুমকি দিয়েছিলেন, ১০০, ১৫০ কিংবা ২০০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করবেন, যদি এই দুই দেশ যুদ্ধ থামাতে রাজি না হয়। তাঁর দাবি, এই শুল্ক-হুমকির ভয়েই নাকি দুই দেশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছে। নইলে অনন্তকাল এই দুই দেশ যুদ্ধে, সংঘর্ষে লিপ্ত থাকত বলেই দাবি তাঁর।
ট্রাম্প সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, 'আমি কেবল শুল্কের ভিত্তিতে কয়েকটি যুদ্ধের নিষ্পত্তি করেছি। উদাহরণস্বরূপ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। আমি বলেছিলাম, যদি তোমরা যুদ্ধ করতে চাও এবং তোমাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকে, তাহলে আমি দু' দেশের উপরই ১০০ শতাংশ, ১৫০ শতাংশ এবং ২০০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করব।'
তিনি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে চলমান সীমান্ত-উত্তেজনা সম্পর্কেও এদিন কথা বলেছেন এবং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি এই সমস্যাটি সমাধান করবেন। নিজেই বলেছেন, তিনি যুদ্ধ-সমস্যা সমাধানে পারদর্শী। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ট্রাম্পের একাধিকবার একই দাবির পরেও, ভারত বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপারেশন সিন্দুরে হস্তক্ষেপের দাবি বা পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
তবে, ট্রাম্প শুল্ক আরোপ বিষয়টি যুদ্ধ থামানোর জন্য ব্যবহার করেন বলে জানালেও, সাম্প্রতিক সময়ের হিসেব, শুল্ক না চাপালে যেন তাঁর ঘুমই হয় না। দিনকয়েক আগে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ১লা নভেম্বর থেকে সমস্ত চীনা পণ্যের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক বৃদ্ধি এবং সফ্টওয়্যার রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের ঘোষণাটি চীনের বিরল মাটির খনিজ পদার্থের উপর রফতানি সীমা আরোপের সিদ্ধান্তের পাল্টা প্রতিক্রিয়া। মার্কিন আধিকারিকরা বলছেন যে, চীনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ দক্ষিণ কোরিয়ায় APEC শীর্ষ সম্মেলনের আগে লাভ অর্জনের জন্য একটি ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ। যেখানে ট্রাম্প এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাক্ষাতের কথা ছিল। সেই বৈঠকটি এখনও অনিশ্চিৎ। ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করার কোনও কারণ দেখছেন না। যদিও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ওই বৈঠকটি বাতিল করেননি।
তাহলে কেন এই হঠাৎ শুল্ক বৃদ্ধি? মনে করা হচ্ছে যে এটা প্রতিশোধমূলক। চীনের বিরল মাটির খনিজ পদার্থের উপর রফতানি সীমা আরোপের সিদ্ধান্ত, আমেরিকার শিল্প ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রকে আঘাত করেছে। আমেরিকা বিরল খনিজ এমপি ম্যাটেরিয়ালসে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা তৈরির চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখনওতা পর্যাপ্ত নয়, ওয়াশিংটন চীনা সরবরাহের উপর নির্ভরশীল।
অন্যদিকে ট্রাম্পের পদক্ষেপ রাজনৈতিকও। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই নিজেকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কঠোর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বাজার অস্থির থাকা সত্ত্বেও, তিনি তাঁর ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে- আমেরিকাকে হুমকির মুখে ফেলা যাবে না। এছাড়াও ট্রাম্পের পদক্ষেপের নেপথ্যে রয়েছে কৌশলগত দিকও। ট্রাম্প শুল্ককে লিভারেজ হিসেবে ব্যবহার করেন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের আলোচনায় চাপ দেওয়ার জন্য এই ধরণের ঘোষণা করেন। এই সিদ্ধান্তের নেপথ্য়ে, শুল্ক আদায়ের বিষয়ে কম, বরং ওয়াশিংটনের শর্তে চীনকে ফের আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হতে পারে।