তিন বার তাজমহল বিক্রি করেও শান্তি হয়নি, বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিটিংবাজ বেচে দেন লালকেল্লা, রাষ্ট্রপতি ভবনও...
আজকাল | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: চিটিংবাজদের দেখা বিশ্বের সর্বত্র পাওয়া যায়। ভারতও ব্যতিক্রম নয়। এ দেশের অন্যতম কুখ্যাত চিটিংবাজ হলেন নটবরলাল। দেশের একাধিক সরকারি সম্পত্তি একাধিক বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। লোক ঠকানোর পদ্ধতি এবং দুঃসাহসিক প্রতারণার জন্য ভারতবাসী আজও মনে রেখেছে নটবরলালকে। তাঁর দুঃসাহসিক কেলেঙ্কারি বিদেশীদেরও প্রতারিত করেছিল। নটবরলাল তাঁদের ভারতীয় স্মৃতিসৌধ ‘কিনতে’ রাজি করিয়েছিলেন।
মিথিলেশ কুমার শ্রীবাস্তব ওরফে নটবরলাল ভারতের এক অনন্য প্রতারক। অনেকের দাবি, তাঁর ৫০টিরও বেশি জাল পরিচয় ছিল যা তিনি চুরি এবং জালিয়াতি করার জন্য ব্যবহার করতেন। মিথিলেশ ১৯১২ সালে সিওয়ান জেলার বাংরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন একজন স্টেশন ম্যানেজার। নটবরলাল তাঁর প্রতিবেশীর চেক ব্যাঙ্কে জমা দিতে গিয়ে নিজের ‘জালিয়াতি'র ক্ষমতা আবিষ্কার করেন। সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবেশীর চেক ভাঙিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে এক হাজার টাকা তুলে নেন নটবরলাল। এরপর তিনি বহু দোকানদার এবং ব্যবসায়ীকে ভুয়ো চেক এবং ডিমান্ড ড্রাফ্ট ব্যবহার করে প্রতারিত করেন। প্রতিবেশী জালিয়াতি ধরে ফেললে তিনি কলকাতায় পালিয়ে চলে আসেন। সেখানেই তিনি তিনি বাণিজ্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং একই সঙ্গে একজন সাধারণ স্টকব্রোকার হিসেবেও কাজ করেন।
শুধরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও কপাল সঙ্গ দেয়নি। কাপড়ে ব্যবসা অসফল হওয়ার পর তিনি ফের জালিয়াতির পথ ধরেন। রেলকর্মীর পরিবারে জন্ম হওয়ায় রেলের পণ্য পরিবহন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন তিনি। এর পাশাপাশি, বাণিজ্যে স্নাতক এবং স্টকব্রোকারের কাজ তাঁকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা সম্পর্কেও ধারণা দিয়েছিল। ১৯৩৭ সালে নটবরলালকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয় নয় টন লোহা চুরির অভিযোগে। এই ঘটনার পর, সে কৌশল পরিবর্তন করে এবং মাদক মেশানো মদ খাইয়ে যৌনকর্মীদের মাদকাসক্ত করে টাকা ও গয়না লুট করতে শুরু করেন। কিছু সময় পরে নটবরলাল এটিকে টাকা উপার্জনের বিপজ্জনক পদ্ধতি বলে মনে করেন এবং প্রতারণা ও জালিয়াতিতে ফিরে যান।
নটবরলালের করা সবচেয়ে আশ্চর্যজনক এবং অবিশ্বাস্য কেলেঙ্কারি ছিল দেশের ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ বিক্রি করা। তিনি একজন নকল সরকারি আধিকারিক হিসেবে নিজেকে পেশ করে কমপক্ষে তিনবার তাজমহল, কমপক্ষে দু’বার লালকেল্লা এবং একবার রাষ্ট্রপতি ভবনও ‘বিক্রি’ করেছিলেন। একবার, তিনি এমনকি সংসদ ভবনও ‘বিক্রি’ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। নটবরলাল ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতির জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে তাজমহল, লালকেল্লা এবং রাষ্ট্রপতি ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সৌধগুলি একজন বিদেশী নাগরিকের কাছে ‘বিক্রি’ করেছিলেন। অনেকেরই ধারণা, তিনি টাটা এবং বিড়লা থেকে শুরু করে ধীরুভাই আম্বানির সঙ্গেও জালিয়াতি করে তাঁদের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলেন।
নানা অপরাধ করলেও নটবরলালকে তাঁর নিজের গ্রাম বাংরায় রবিন হুডের মতো মনে করা হয়। গ্রামে তিনি চুরি করা সম্পদ দরিদ্রদের মধ্যে ভাগ করে নিতেন বলে জানা গিয়েছে। অহিংস এবং প্রায়শই হাস্যকর উপায়ে ধনী ব্যক্তিদের প্রতারণা করার তাঁর কীর্তি গ্রামে বহুল প্রচলিত ছিল।
তাকে কমপক্ষে নয় বা দশ বার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। তবুও তিনি প্রায় প্রতিবারই কোনও না কোনও নতুন কৌশল ব্যবহার করে পালিয়ে যেতেন। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৫৭ সালে তিনি কানপুর জেল থেকে জেলরক্ষীদের ঘুষ দিয়ে নগদ ভর্তি একটি স্যুটকেস দিয়ে, পুলিশের পোশাক পরে কারাগারে প্রবেশ করেছিলেন এবং তারপর হঠাৎ করে সামনের গেট দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে রক্ষীদের অভিবাদন জানিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে, জেলরক্ষীরা লক্ষ্য করেন যে তাঁর দেওয়া স্যুটকেসে টাকা নয়, পুরনো খবরের কাগজ ছিল, যা পরিস্থিতিকে হাস্যকর করে তুলেছিল। অনেকেই বলেন যে, নটবরলাল মাত্র ২০ বছর জেলে ছিলেন, যদিও তাঁকে কয়েকশো বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।