‘বাড়িটা যে কোথায় ছিল...’ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ভাবেন মংলু মাঝি!
বর্তমান | ১৩ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: বন্যার জলে ভেসে গিয়েছে ঘর। মংলু মাঝির চোখের সামনে ভেসে গিয়েছে ৫টি গোরু। এমনকী ডায়না ও গাঠিয়া নদীর জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছিলেন নাগরাকাটার টন্ডু গ্রামের বাসিন্দা মংরু মাঝি নিজে ও তাঁর ১৪ বছরের ছেলে পারভীনও। কিন্তু ‘কই মাছের প্রাণ’ বলেই রক্ষা পেয়েছেন তাঁরা। বেশ কিছুদূর ভেসে যাওয়ার পর গাছ আঁকড়ে ধরে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে বাবা ছেলে। তিন ঘণ্টা এভাবেই কেটে যায়। এরপর জলের স্রোত একটু কমলে গ্রামবাসীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দড়ি বেঁধে উদ্ধার করে মংরু ও তাঁর ছেলেকে। এখন ভেঙে পড়া টানাটানি সেতুর পাশে ত্রাণ শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন বাবা-ছেলে।যদিও প্রাণে বাঁচলেও মংলুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। সর্বগ্রাসী নদীর ছোবলে তলিয়ে গিয়েছে সব সহায় সম্বল। মাঝেমধ্যেই নদীর পাড়ে গিয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকছেন তিনি। জলে ভরে উঠছে দু চোখ। অস্ফুষ্ট স্বরে যেন তিনি বললেন, “বাড়িটা যে কোথায় ছিল, খুঁজে পাচ্ছি না। চারদিকে শুধুই তো জল। মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলবে কোথায়?”টন্ডুর ওই ত্রাণ শিবিরে দেখা মিলল আর এক দুর্গত অজিত সিংয়ের সঙ্গে। তিনি জানান, “৫ অক্টোবর ভোরে লোকজনের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে জানালা খুলে দেখি, বাঁধ ভেঙে হু হু করে জল ঢুকছে গ্রামে। উঠোনে জল চলে এসেছে। দেখতে দেখতে ঘরে জল ঢুকে যায়। টিন ভেঙে আমি ও দাদা পুনো সিং চালের উপর আশ্রয় নিই। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে ঘরটা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। চালের উপর বসেই ভেসে যেতে থাকি। বেশ কিছুটা ওভাবে ভেসে যাওয়ার পর একটা মোটা গাছ পেয়ে তাতেই চেপেই বসি। ভাগ্যিস গাছটা ছিল। না হলে কী যে পরিণতি হতো কে জানে!”