ভুটান থেকে আসা জলেই উত্তরবঙ্গে এত বড়ো বিপর্যয় ঘটেছে। তাই এই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ভুটানকে। রিভার কমিশনের দাবি জানিয়ে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বৃষ্টি-ধসে বিপর্যস্ত নাগরাকাটার বামনডাঙা আদর্শ গ্রামে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তার সমস্ত আশ্বাস দেন তিনি। দুর্যোগে প্রিয়জনকে হারানো সাত পরিবারের হাতে হোমগার্ড পদে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মৃতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। নিজে হাতে বিলি করেন ত্রাণসামগ্রী। সেখান থেকেই এই ইস্যুতে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন তিনি বলেন, ‘অনেকদিন ধরে রিভার কমিশনের দাবি জানিয়ে আসছি। কেন্দ্র গুরুত্ব দেয়নি। ১৬ অক্টোবর দিল্লিতে বৈঠক আছে। আমি আমাদের প্রতিনিধি পাঠাব।’ সেখানে আবারও ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশনের দাবি তোলা হবে বলেও এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী। যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গের বিপর্যয়ের পরেই ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন নিয়ে সরব হয় তৃণমূল। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে কেন্দ্রকে দুষে শাসকদল দাবি জানায়, উত্তরবঙ্গে এতটা ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানো যেত। স্রেফ কেন্দ্রের উদাসীনতার জন্যই সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারের তরফে বলা সত্ত্বেও ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন তৈরি হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়।
সেই সঙ্গে ভুটান থেকে জলের সঙ্গে ভেসে আসা ডলোমাইট নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘জল ছাড়লে বলে ছাড়বে তো। জলের সঙ্গে ডলোমাইটও আসছে। তাতেই আরও ক্ষতি বাড়ছে। ওই ডলোমাইটের ধাক্কায় বাড়িগুলো আরও ভেঙে যাচ্ছে।’ স্থানীয় প্রশাসনকে তিনি নদীর জলে ভেসে আসা ডলোমাইট তুলে নেওয়ার নির্দেশও দেন। এর পরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, ‘সবটাই তো আমাদের করতে হয়। দিল্লি এক পয়সাও দেয় না।’
এ দিন স্থানীয়দের আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোনও চিন্তা নেই। যাঁদের বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে। তাঁদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। শিবির তৈরি করা হয়েছে সেখানে গিয়ে নাম লেখান। গোরু-ছাগল হারালেও নাম লেখান। প্রশাসন সাহায্যের জন্য রয়েছে। আপাতত নদীর উপর অস্থায়ী সেতু গড়ে দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সব ঠিক করে দেওয়া হবে।’ ইতিমধ্যেই এলাকায় দুর্গতদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিতে বামনডাঙায় শিবির খোলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রবিবার উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, দুর্যোগে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার–সহ অনেক জেলায় বহু মানুষের দরকারি নথি নষ্ট হয়েছে। আধার কার্ড, রেশন কার্ড–সহ বিভিন্ন নথিপত্র জলে ভেসে গিয়েছে। দুর্গত জনতার হাতে দ্রুত এই নথিপত্র পৌঁছে দিতে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান প্রকল্পে’র সময়সীমা এই অঞ্চলগুলিতে বাড়ানো হচ্ছে।
সোমবার দুপুর হতেই আলিপুরদুয়ারের হাসিমারার গেস্ট হাউস থেকে এলাকা পরিদর্শনের জন্য যান মুখ্যমন্ত্রী। রাস্তার যতটুকু গাড়ি যেতে পেরেছে ততটুকুই তিনি গাড়ি করে যান। তারপরই নাগরাকাটায় খারাপ রাস্তা দেখে নেমে পড়েন। হেঁটেই এলাকা ঘুরে দেখেন। সঙ্গে থাকা আধিকারিকদের যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাস্তা ও সেতু মেরামতির কাজ করার নির্দেশ দেন।