অর্ণব দাস, বারাকপুর: ঝাঁচকচকে রাস্তা। যতদূর দেখা যায়, ততদূরই বলতে গেলে ফাঁকা। যা দেখে লোভসামলাতে পারেনি উঠতি বয়সি বাইকাররা। সম্প্রসারণের পর থেকে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে তাঁরা শুরু করে দেয় বাইকের স্টান্টবাজি। দ্রুত গতিতে কখনও বাইকের সামনে চাকা আবার কখনও পিছনের চাকা তুলে দেওয়া থেকে আচমকা ডিস ব্রেক চেপে পিছনের চাকা ঘুরিয়ে একেবারে ইউ টার্ন, ‘মরণকূপে’র আদলে বাইকারদের এহেন খেলা প্রায়ই চোখে পড়ত পথচলতিদের।
শুধু চাক্ষুষ দেখা নয়, ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের রিল স্ক্রল করলেও ভয়ানক এই ভিডিও প্রায়শ নজরে আসত। যা অনেক তরুণকে আবার অনুপ্রেরণা জোগাত। বিষয়টি পুলিশের নজরে এলে অভিনব উদ্যোগ নিল বারাকপুর কমিশনারেটের ট্রাফিক বিভাগ। শুরু হল ‘ইউ টার্ন’ কর্মসূচি। সম্প্রতি এহেন বাইকারদের সমাজমাধ্যমে খুঁজে বের করে অভিভাবকদের সঙ্গে তাদের ডাকা হয়। এরপর তাদের বাইক স্টান্টে ঝুঁকির কথা বোঝানো-সহ বিগত দিনের দুর্ঘটনার ভিডিও দেখালে তাঁরা নিজেরাই অনুতপ্ত হয়। এরপর সেই বাইকাররা শুরু করে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রচার।
সম্প্রতি তাঁরা কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে পুলিশের হয়ে সচেতনতা প্রচারে লিফলেট বিলি করেছে। আগামীতে তারা ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রচারে ভিডিও তৈরি করে নিজেদের সমাজমাধ্যমে পোস্ট করবে বলেও জানিয়েছে। উল্লেখ্য, দুর্গাপুজোর শুরুতে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে পরপর বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনার পর সপ্তমী থেকে স্পেশাল ড্রাইভে নেমেছিল বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ট্রাফিক বিভাগ। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে অভিযোগে ৫ হাজারের বেশি চালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয় পুলিশ। এরপরই দুর্ঘটনা রোধে কাঁপা, কেউটিয়া মোড়, বারাকপুর মোহনপুর ও সোদপুর এলাকায় করা হয় গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির। পাশাপাশি বিকট আওয়াজ তুলে রাস্তা কাঁপানো একশ্রেণির বাইকারদের শায়েস্তা করতে মডিফায়েড সাইলেন্সার পাইপ বদলানোর দাওয়াইয়ের পথে হেঁটেছিল একাধিক ট্রাফিক গার্ড। কান ঝালাপালা আওয়াজ করা বাইক আটক করে মিস্ত্রী ডাকিয়ে মডিফাই সাইলেন্সর খুলিয়ে মোটর ভেহিক্যালস আইন অনুযায়ী জরিমানাও করা হয়।
তবু, প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬ লেনের কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে বাইকারদের দাপট কমানো সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে, কলকাতা ও নদিয়া সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ এই এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছিল। তাই স্টান্টবাজ বাইকারদের বুঝিয়ে সঠিক পথে এনে তাদের দিয়েই ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর প্রচার করতে ‘ইউ টার্ন’ কর্মসূচি নেয় কমিশনারেটের ট্রাফিক বিভাগ।
এনিয়ে বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (ট্রাফিক) অম্লানকুসুম ঘোষ জানিয়েছেন, “প্রথমে আট-দশ জন বাইকারকে চিহ্নিত করে ইউ টার্ন কর্মসূচিতে শামিল করা হয়েছে। আরও দশজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদেরও অভিভাবকদের সঙ্গে ডেকে স্টার্ট বাজির ভয়াবহতা বুঝিয়ে ইউ টান কর্মসূচিতে শামিল করা হবে।”