আজকাল ওয়েবডেস্ক: পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র। গুজরাটের গান্ধীনগরের বাসিন্দা ঈশিত ভট্ট। 'কৌন বনেগা ক্রোড়পতি'র (কেবিসি) ১৭তম সিজনে এসেই সে এখন সারা দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সঞ্চালক অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী কথোপকথন টেলিভিশনে শিশুদের আচরণ, অভিভাবকত্ব এবং শিষ্টাচার নিয়ে দেশজুড়ে এক নতুন বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দর্শকদের নজর কাড়ে ঈশিত। অমিতাভ বচ্চনকে সে সটান বলে বসে, "আমি নিয়মকানুন জানি, তাই আপনি এখন আমাকে নিয়ম বোঝাতে বসবেন না।" এখানেই শেষ নয়, তার কর্তৃত্বের সুর চড়তেই থাকে। কখনও সে বলে, "আরে, অপশন দিন তো!" আবার কখনও উত্তর দেওয়ার সময় বলে, "স্যার, একটা কেন, চারটে লক লাগিয়ে দিন, কিন্তু লক করুন।"
অনুষ্ঠানে রামায়ণ সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন করেন বচ্চন। ঈশিত অপশন চায় এবং শেষ পর্যন্ত ভুল উত্তর দিয়ে বসে। ফলে কোনও পুরস্কার মূল্য ছাড়াই তাকে শো থেকে বিদায় নিতে হয়।
অমিতাভ বচ্চনের প্রতিক্রিয়া
ঈশিতের আচরণ প্রসঙ্গে অমিতাভ বচ্চন মন্তব্য করেন, "কখনও কখনও বাচ্চারা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ভুল করে ফেলে।" এই কথোপকথনের ভিডিও ক্লিপটি নিমেষে ভাইরাল হয়ে যায় এবং সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
নেটপাড়ায় সমালোচনার ঝড়
এই পর্বটি সম্প্রচারিত হওয়ার পরেই নেটমাধ্যমে মন্তব্যের বন্যা বয়ে যায়। এক ব্যবহারকারী লেখেন, "আপনার সন্তানের জ্ঞান থাকতেই পারে, কিন্তু ওর যদি আদবকায়দা না থাকে বা বড়দের সামনে কীভাবে কথা বলতে হয় তা না জানে, তাহলে ও জীবনে সফল হতে পারবে না। আমি অমিতাভ বচ্চনের জায়গায় থাকলে আগে দুটো চড় কষাতাম, তারপর প্রশ্ন করতাম।" আরেকজন লেখেন, "একেবারে সঠিক পরিণতি। ঔদ্ধত্য উচিত শিক্ষা পেয়েছে। হয়তো এবার ওর বাবা-মা শিখবেন যে, একটা উদ্ধত বাচ্চাকে বড় করা অভিভাবকত্ব নয়, এটা সমাজকে বিরক্ত করার প্রশিক্ষণ দেওয়া।" তৃতীয় একজন কেবল মন্তব্য করেন, "পাকা ছেলে।"
ঈশিতের এহেন আচরণ নিয়ে অধিকাংশই সমালোচনামুখর। কেউ কেউ আবার একরত্তি ছেলের বিরুদ্ধে এ ধরনের অনলাইন আক্রমণকে বাড়াবাড়ি বলেও মনে করছেন। এমনকী, দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য পর্বটি আংশিকভাবে চিত্রনাট্য মেনে তৈরি কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।
অভিভাবকত্ব ও শিষ্টাচার নিয়ে বিতর্ক
এই ঘটনা জ্ঞান এবং বিনয় সম্পর্কিত নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে। বহু নেটিজেনের মতে, পড়াশোনায় আত্মবিশ্বাস থাকা ভাল, কিন্তু তার পাশাপাশি গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং যথাযথ আচরণও জরুরি, বিশেষত যখন শিশুরা জাতীয় টেলিভিশনের মঞ্চে উপস্থিত হয়।
এই বিতর্ক বাবা-মা এবং শো নির্মাতাদের দায়িত্ববোধ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। ছোট প্রতিযোগীদের ক্যামেরার সামনে পাঠানোর আগে পর্যাপ্ত ভদ্রতা শেখান হয় কি না, তা নিয়েও সন্দিহান অনেকে।
খুদে প্রতিযোগীর পাশে চিন্ময়ী শ্রীপদা
ঈশিতকে নিয়ে অনলাইন ট্রোলিংয়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন সঙ্গীতশিল্পী চিন্ময়ী শ্রীপদা। তিনি এই ঘটনাকে 'বুলিং' আখ্যা দিয়েছেন। এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ তিনি লেখেন, "টুইটারে প্রাপ্তবয়স্করাই সবচেয়ে অমার্জিত, অশ্রাব্য এবং অপমানজনক ভাষায় কথা বলেন। অথচ কাশির সিরাপে শিশুদের মৃত্যুর সময় এদের কারও গলা থেকেই আওয়াজ বেরোয় না। আর এখন একটা বাচ্চার পিছনে লেগেছে। এতেই এদের আসল রূপ প্রকাশ পায়। গোটা দলটা একটা উত্তেজিত বাচ্চার পিছনে পড়েছে - কী ভয়ঙ্কর কাণ্ডজ্ঞানহীন হিসেবে এরা নিজেদের তৈরি করেছে।"
রিয়্যালিটি শো নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
এই ঘটনা টেলিভিশনের মঞ্চে খুদে প্রতিযোগীদের মানসিক পরিবেশ নিয়েও বৃহত্তর বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। দর্শকরা প্রশ্ন তুলছেন, কেবিসি-র মতো প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান কি শিশুদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে? শো-এর ধরনই কি তাদের মধ্যে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বা মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে?
শোনা যাচ্ছে, 'কৌন বনেগা ক্রোড়পতি ১৭'-র টিআরপি রেটিং পড়তির দিকে। তার মধ্যেই ঈশিতের পর্বটি অনুষ্ঠানকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এল। এই বিতর্ক জাতীয় সংবাদমাধ্যমে শিশুদের সম্মানজনক আচরণ সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সম্প্রচারকারী সংস্থা ও পরিবারের দায়িত্ব নিয়েও বৃহত্তর আলোচনার সৃষ্টি করেছে।