• কন্যাভ্রূণ হত্যা! পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা কম নিয়ে গভীর উদ্বেগ সুপ্রিম কোর্টের একমাত্র মহিলা-বিচারপতির...
    আজকাল | ১৪ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের কয়েকটি রাজ্যে কন্যা ভ্রূণহত্যা এবং শিশুকন্যা হত্যার কারণে লিঙ্গ অনুপাতের ক্রমশ অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগারত্না। গত শনিবার (১১ অক্টোবর, ২০২৫) তিনি সাফ জানান, কন্যাসন্তানদের শুধু বেঁচে থাকা নয়, তাদের যথাযথ বিকাশও নিশ্চিত করতে হবে।

    সুপ্রিম কোর্টের জুভেনাইল জাস্টিস কমিটি এবং ইউনিসেফ ইন্ডিয়ার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত "কন্যাসন্তানের সুরক্ষা: ভারতে তার জন্য এক নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ" শীর্ষক এক জাতীয় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।

    অনুষ্ঠানে বিচারপতি নাগারত্নার সঙ্গেই উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই এবং কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী। এছাড়াও জুভেনাইল জাস্টিস কমিটির সদস্য বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা-সহ শীর্ষ আদালতের অন্য বিচারপতিরাও হাজির ছিলেন।

    বিচারপতি নাগারত্না জোর দিয়ে বলেন, ভারতের একটি শিশুকন্যাকে তখনই প্রকৃত অর্থে সমান নাগরিক হিসেবে গণ্য করা যাবে, যখন সে তার পুরুষ প্রতিপক্ষের মতো যে কোনও কিছু অর্জন করার স্বপ্ন দেখতে পারবে এবং লিঙ্গবৈষম্যের বাধা ছাড়াই সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে। তাঁর কথায়, "অন্যভাবে বললে, এ দেশে জন্মানো একটি ছেলে শিশুর মতো তারও জন্মানোর অধিকার, সঠিক পুষ্টি, যত্ন, শিক্ষা, নিরাপদ পরিবেশ এবং নিজের পরিচিতি গড়ে তোলার সুযোগ থাকতে হবে। তাকে শুধু টিকে থাকলে চলবে না, সক্রিয়ভাবে বিকশিত হতে হবে।"

    চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভারতে একটি শিশুকন্যার প্রথম বাধাই হল তার জন্ম নেওয়ার অধিকার। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, ছেলে না হয়ে মেয়ে হয়েছে শুনলে আজও অনেক পরিবার হতাশ হয়। তিনি আরও বলেন, "ভারতে শিশু লিঙ্গ অনুপাত (০-৬ বছর) সামান্যই উন্নত হয়েছে। ২০১১ সালের জনগণনায় প্রতি ১০০০ জন বালকের অনুপাতে ৯১৪ জন বালিকা থেকে বেড়ে জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫-এ এই সংখ্যা ৯২৯ হয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি রাজ্যে কন্যা ভ্রূণহত্যা বা শিশুকন্যা হত্যার কারণে লিঙ্গানুপাত আরও খারাপ হওয়ার উদ্বেগজনক খবরও পাওয়া যাচ্ছে।" তবে অনেক রাজ্যে এই অনুপাতের উন্নতি হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

    সুপ্রিম কোর্টের জুভেনাইল জাস্টিস কমিটির চেয়ারপার্সন হিসেবে বিচারপতি নাগারত্না পুষ্টির যত্নের উপর জোর দিয়ে বলেন, সঠিক পুষ্টি ছাড়া কন্যাসন্তানের উন্নতির সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হতে পারে। তাঁর কথায়, "অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ছেলেদের তুলনায় কন্যাসন্তানদের ইচ্ছাকৃতভাবে কম বা নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়। মিড-ডে মিল, 'অ্যানিমিয়া মুক্ত ভারত'-এর মত প্রকল্পগুলি পুষ্টি নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা নিলেও শৈশবের অপুষ্টি যে একটি মেয়ের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে কতটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, সে বিষয়ে আরও প্রচার প্রয়োজন।"

    বাল্যবিবাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী দেশে বাল্যবিবাহের হার ক্রমশ কমছে, যা একটি ইতিবাচক দিক। গত পনেরো বছরে সরকারি নীতি এবং সামাজিক প্রচারের ফলে ভারতে বাল্যবিবাহের হার প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তাঁর মতে, "বাল্যবিবাহ রোধ আইন, ২০০৬ এবং শিশু অধিকার সংক্রান্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ মেনে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি ইউনিসেফের সহযোগিতায় একাধিক পদক্ষেপ করেছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হল আঞ্চলিক বাস্তবতা মাথায় রেখে একটি সামগ্রিক সমাধানসূত্র তৈরি করা, যাতে গৃহীত পদক্ষেপগুলি সবচেয়ে কার্যকর হয়।"

    কন্যাসন্তানের শিক্ষা প্রসঙ্গে বিচারপতি নাগারত্না বলেন, শুধুমাত্র মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্যই নয়, দেশের সমৃদ্ধির জন্যও গুণগত শিক্ষা অপরিহার্য। তাঁর কথায়, "ভারত যদি বিশ্বশক্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তবে আজকের শিশুকন্যাদের ভবিষ্যতের নারী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যারা দেশের যাত্রাপথ নির্ধারণ করবে।"

    তিনি আরও জানান, জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী ১৫-১৭ বছর বয়সী মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। তাঁর কথায়, " মাধ্যমিক স্তরের পর উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলছুটের হার এখনও অনেক বেশি। কেন মেয়েরা স্কুল ছেড়ে দেয়? ছেলের স্বপ্নপূরণের জন্য অনেক সময় মেয়েটিকে নিজের পড়াশোনা পুরোপুরি বিসর্জন দিতে হয় বা এমন বিষয় নিয়ে পড়তে হয়, যাতে তার আগ্রহ নেই। এই ক্ষতিকর কারণগুলিকে চিহ্নিত করে সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষা হতে হবে সবরকম গোঁড়ামি, পক্ষপাত এবং ভাবাদর্শ মুক্ত, যা একজন ব্যক্তিকে সমাজের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে।"

    বিচারপতি নাগারত্না আদালত ও থানাগুলিতে ট্রমা-অবগত এবং শিশুবান্ধব পদ্ধতি প্রসারের উপর জোর দেন। তিনি তথ্য দিয়ে জানান, ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বিপুল সংখ্যক চার্জশিট দাখিল হওয়া সত্ত্বেও মানব পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ৪.৮ শতাংশের সাজা হয়েছে।
  • Link to this news (আজকাল)