নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: মামলা জামিন বাতিলের। তাও ছ’বছর আগের। অথচ সে নিয়ে উচ্চবাচ্য না করে অন্য একটি আদালত অবমাননা মামলার শুনানির জন্য তদ্বির করায় সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রবল ভর্ৎসনার মুখে পড়ল সিবিআই। ইস্যু ছিল, রাজ্য পুলিশের বর্তমান ডিজি রাজীব কুমারের জামিন। এদিন দেশের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চে ছিল শুনানি। এর আগে শেষবার শুনানি হয়েছিল ২০১৯ সালে ২৯ নভেম্বর। আর এই ছ’বছরে রাজীব কুমারকে একবারের জন্যও জিজ্ঞাসাবাদের নোটিশ পাঠায়নি সিবিআই। তাই এদিন শুনানির শুরুতেই বিষয়টি জানতে পেরে সিবিআইয়ের আইনজীবী তথা দেশের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে প্রবল সমালোচনার মুখে ফেললেন বিচারপতি গাভাই। বললেন, ‘এতদিন পর কেন এই মামলার শুনানি? এতদিন মামলা ফেলে রাখা যায়? তার উপর সেই জামিন মামলার শুনানি না চেয়ে অন্য মামলার শুনানি চাইছেন? কেন এতদিন একবারের জন্যও রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি? আপনাদের কাণ্ডকারখানায় অবাক হচ্ছি।’ জবাবে তুষার মেহতা বলেন, ‘ঠিকই। এতদিন ডাকা হয়নি। তবে এই জামিন মামলার চেয়েও বড় বিষয় হল, আদালত অবমাননা। সিবিআই পশ্চিমবঙ্গে (সারদা চিটফান্ডের) তদন্ত করতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছে। আধিকারিকদের আটকে রেখেছিল কলকাতা পুলিশ। রাজ্য সরকারই যেখানে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী! তাই আমরা চাই, সেই মামলাটিও শুনুন।’
রাজীব কুমারের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব পালটা বলেন, ‘অহেতুক আমার মক্কেলকে হেনস্তা করা হচ্ছে। তিনি তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করেছেন। তাঁর মতো গুণী অফিসারের বদনাম করতেই সিবিআই এখন এসব বলছে। তদন্তে সহযোগিতা করতে সিবিআইয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে শিলংয়ে পাঁচদিন প্রায় ৪০ ঘণ্টা জেরায় হাজির ছিলেন রাজীব কুমার। গত ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর কলকাতা হাইকোর্ট আগাম জামিনও দিয়েছে। তারপরও কেন গত ছ’বছর একবারও সমন পাঠানো হয়নি? অহেতুক সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন করে বদনাম করতে চাইছে। স্রেফ হয়রানি করতেই এই মামলা।’
এতেই সিবিআইয়ের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতিও সিবিআইয়ের উদ্দেশে বলেন, ‘গত ছ’বছর ধরে আপনারা কী করছিলেন? এতদিন ধরে মামলা রাখার কী প্রয়োজনীয়তা? তাহলে বলুন কী করবেন? মঙ্গলবার আদালত অবমাননা মামলাটির শুনানি হোক। জামিন মামলাটি খারিজ করে দিচ্ছি।’ তা শুনে তুষার মেহতা কাকুতিমিনতি করতে থাকেন। বলেন, ‘সেটা করবে না। আমাকে বিশ্বাস করুন। একসঙ্গে দু’টি মামলা শুনুন। তাহলেই বুঝবেন কেন বলছি। মঙ্গলবার নয়। অন্যদিন শুনুন।’ যদিও ফের দেশের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আগে বলুন, এই ছ’বছরে একটিবারের জন্যও রাজীব কুমারকে ডাকলেন না কেন? আবার এখন সেটির জন্য তদ্বির করে অন্য মামলাকে জুড়তে চাইছেন? অবমাননার মামলা আলাদাও তো শুনতে পারি।’ যদিও শেষমেশ সিবিআইয়ের অনুরোধ মেনে আগামী শুক্রবার ১৭ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই সংক্রান্ত সব মামলাই একত্রে শোনা হবে।