• ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন গঠনে ঢিলেমি কেন, তোপ মমতার
    বর্তমান | ১৪ অক্টোবর ২০২৫
  • ব্রতীন দাস, বামনডাঙা (নাগরাকাটা): ‘ভুটানের জলেই এতবড় বিপর্যয়। ওরা ক্ষতিপূরণ দিক।’ সোমবার বিধ্বস্ত নাগরাকাটার বামনডাঙায় দাঁড়িয়ে এই দাবিই তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন গঠনে কেন ঢিলেমি করা হচ্ছে, তা নিয়ে তোপ দাগলেন তিনি। বললেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন হোক। এবং সেখানে মেম্বার রাখা হোক বাংলাকে। কিন্তু আজও তা হয়নি।’ কেন্দ্রকে তাঁর তোপ, ‘ভুগতে তো হচ্ছে আমাদের। দিল্লি এক পয়সা দেয় না। সব আমাদের করতে হয়। বাংলার চাপে ১৬ তারিখ দিল্লিতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। রাজ্যের অফিসার পাঠানো হবে।’ 

    শুধু জল নয়, জলের সঙ্গে ভুটান থেকে প্রচুর ডলোমাইট চলে আসছে। এর জেরে শেষ হয়ে যাচ্ছে ডুয়ার্সের বনাঞ্চল থেকে চা বাগান, এমনকি কৃষিজমিও। এনিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘ভুটানের জলে আমাদের এতবড় ক্ষতি হয়ে গেল। আমরা চাই, ভুটান ক্ষতিপূরণ দিক।’ একইসঙ্গে ভুটান থেকে নদীর জলের সঙ্গে বয়ে আসা ডলোমাইট ডুয়ার্সের যেসব জায়গায় জমে রয়েছে, সেগুলি দ্রুত তোলার ব্যাপারে আধিকারিকদের নির্দেশ দেন মমতা। 

    বিপর্যয়ের পরই উত্তরের বিধ্বস্ত এলাকায় ছুটে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ৬ অক্টোবর নাগরাকাটার কালিখোলায় দাঁড়িয়ে মৃতদের পরিবারের হাতে তিনি তুলে দিয়েছিলেন ৫ লক্ষ টাকার চেক। দুর্গত পরিবারগুলির পাশে থাকার বার্তা দিয়ে জানিয়েছিলেন, কয়েকদিনের মধ্যে আবার আসবেন। বিপর্যয়ে মৃতদের পরিবারপিছু একজনকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে। কথা দিলে যে রাখেন, এদিন আরও একবার তা প্রমাণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বামনডাঙায় পৌঁছে দুর্যোগে মৃতদের পরিবারপিছু একজন সদস্যের হাতে তুলে দেন হোমগার্ডের চাকরির নিয়োগপত্র। পাশাপাশি নিজের হাতে বিলি করেন ত্রাণ। বামনডাঙা মডেল ভিলেজ, টন্ডু গ্রামে ত্রাণ শিবিরে থাকা দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। ঠিকমতো ত্রাণ মিলছে কি না জানতে চান। নাগরাকাটায় ডায়না নদীর উপর টানাটানি সেতু কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, নিজে তা খতিয়ে দেখেন। বিপর্যস্ত এলাকা দ্রুত পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন। 

    বিপর্যয়ে মিরিকের পর ডুয়ার্সের নাগরাকাটাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বহু গ্রাম কার্যত তছনছ হয়ে গিয়েছে। জাতীয় সড়ক থেকে বামনডাঙায় পৌঁছতে ১৪ কিমি পথের একাধিক জায়গায় ভেঙেছে রাস্তা, কালভার্ট। ভেঙে পড়েছে টানাটানি সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেতুর মূল অংশ। শুধুমাত্র বামনডাঙা মডেল ভিলেজে জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। নিখোঁজ একজন। দুর্গত এলাকায় দাঁড়িয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁদের ঘরবাড়ি ভেঙেছে, চিন্তা করতে হবে না। রাজ্যের তরফে বানিয়ে দেওয়া হবে। বিমার টাকা পাবেন কৃষকরা। যাঁদের গবাদিপশু ভেসে গিয়েছে, তাঁরাও ধীরে ধীরে পাবেন।’ যাঁদের নথিপত্র নষ্ট গিয়েছে, তাঁদের ক্যাম্পে আবেদন করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দেন, আবেদন করলে নথি তৈরি করে দেওয়া হবে। 
  • Link to this news (বর্তমান)