• বিতর্ক উসকে দুর্গাপুরে পদ্মের ধর্নামঞ্চে নির্যাতিতার বাবা
    বর্তমান | ১৪ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: বিরোধী দলনেতার হাত ধরে ধর্নামঞ্চে উঠে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতাকে আরও স্পষ্ট করে দিলেন দুর্গাপুরে নির্যাতিতার বাবা। যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক দানা বেঁধেছে। অনেকেই বলছেন, এভাবে সরসরি রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে উনি গণধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক একটি ঘটনাকে লঘু করে দিচ্ছেন। 

    ঘটনার তিনদিনের মধ্যেই জড়িত পাঁচ অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে ধর্না মঞ্চ গড়ে বিজেপি। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে সোমবার সেই ধর্না মঞ্চেই বিরোধী দলনেতার হাতে ধরে উঠতে দেখা যায় নির্যাতিতা ডাক্তারি পড়ুয়ার বাবাকে। তাঁকে মঞ্চের সামনে চেয়ারে বসিয়ে বিজেপি নেতারা রাজ্য সরকারেকে উৎখাতের ডাক দেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেই মঞ্চ থেকে দুর্গাপুরে পুরভোট কেন হচ্ছে না, তা নিয়েও সরব হন বিজেপি নেতারা।  

    এদিন, আগাগোড়াই বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে রইলেন নির্যাতিতার বাবা। সকালে দুর্গাপুরে এসে প্রথমে বিরোধী দলনেতা একান্তে বৈঠক করেন নির্যাতিতার বাবার সঙ্গে। বিজেপির নির্দিষ্ট করে দেওয়া ঘরেই তিনি ছিলেন। সেখানে নিজের ফোন থেকে বিরোধী দলনেতার সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর কথা বলিয়ে দেন। পরে দুর্গাপুরের তানসেনে বিরোধী দলনেতার সাংবাদিক সম্মেলনেও হাজির ছিলেন নির্যাতিতার বাবা। সেখান থেকেই তিনি সিটি সেন্টারে  বিজেপির মঞ্চে যান বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে। 

    এই মঞ্চ নিয়ে পুলিশ ও বিজেপির মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। বিনা অনুমতিতে মঞ্চ গড়তে গেলে পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ তোলেন বিজেপি নেতারা। মঞ্চে উঠেই বিরোধী দলনেতা পুলিশকে হুঁশিয়ারি দেন। তারপর পুলিসের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ তুলে ওই মঞ্চ থেকেই পুলিশকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন বিজেপি জেলা সহ সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। এই রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে মুখে ঢেকে বসে থাকতে দেখা যায় নির্যাতিতার বাবাকে। 

    এখা঩নেই শেষ নয়। এদিন সকালে কোনও বহিরাগতকেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতালে ঢুকতে দিচ্ছিল না কর্তৃপক্ষ। তখনই নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ঩ওড়িশার বিজেপির রাজ্য সম্পাদিকা শিপ্রা বাজপেয়ীকেও ঢুকতে বাধা দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারপরই নির্যাতিতার বাবা এসে শিপ্রা বাজপেয়ীকে সঙ্গে নিয়ে মেয়ের কাছে যান। বেরিয়ে এসে বিতর্ক ঢাকতে নেত্রী বলেন, ‘আমি নির্যাতিতার পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে তাঁর সঙ্গে দেখা করে এসেছি।’ 

    বিজেপির সঙ্গে তাঁর সখ্য নিয়ে ফোন করা হয়েছিল নির্যাতিতার বাবাকে। তিনি  ফোন কেটে দেন। এ প্রসঙ্গে দুর্গাপুর পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘নির্যাতিতার পরিবারের প্রতি আমরা সমব্যথী। কিন্তু যেভাবে নির্যাতিতার বাবাকে নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’ তৃণমূল জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘বিজেপি নারী নির্যাতন নিয়ে প্রতিবাদী হলে কেন অপরাজিত বিল অনুমোদন করল না। নির্যাতিতার বাবা নিশ্চয়ই বিজেপি করেন। তা‌ই মঞ্চে উঠেছেন।’

    এদিকে ওড়িশায় বিজেপি সরকারও দুর্গাপুরের ঘটনায় বাড়তি তৎপর। জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য ঘুরে যাওয়ার পর ওড়িশার রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন দুর্গাপুরে আসেন সোমবার। এদিন তিনি নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলতে চান। দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করার চেয়ারপার্সন শোভনা মোহান্তির নেতৃত্বের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল হাসপাতালে যান। এর আগে এই ঘটনা নিয়ে ওড়িশা সরকারও তদন্ত কমিটি গড়েছে। তার প্রতিনিধিরা দুর্গাপুরে এসেছিলেন। 

     সোমবার দুর্গাপুরে ওড়িশা মহিলা কমিশনের সদস্যরা। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)