শ্যালকের উন্নতিতে আক্রোশ, খুনের ৯ দিন পর জামাইবাবু সহ গ্রেফতার চার
বর্তমান | ১৪ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, বারুইপুর: একাদশীর দিন বারুইপুরের বেগমপুরে উদ্ধার হয়েছিল শান্ত মণ্ডলের নলি কাটা দেহ। খুনের ৯ দিন পর বারুইপুর থানার এসআই রনি সরকারের নেতৃত্বে পুলিশের বিশেষ টিমের হাতে গ্রেফতার হল মৃতের জামাইবাবু সহ চারজন। পুলিশ জানিয়েছে, জামাইবাবুর নাম দেবব্রত পাত্র। বাড়ি বারুইপুরের বেলেগাছির হরেন্দ্রপল্লি। বাকি অভিযুক্তদের নাম মিনাজুল পাইক, জসিমুদ্দিন লস্কর, হাফিজুল মোল্লা। হাফিজুল অটো চালক। মিনাজুল ও জসিমুদ্দিনের বাড়ি বেলেগাছি। হাফিজুলের বাড়ি জীবনতলা থানা এলাকায়। পুলিশ হাফিজুলের অটো বাজেয়াপ্ত করেছে।
অভিযুক্তদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, আক্রোশের জেরেই শ্যালক শান্তকে খুন করে দেবব্রত। খুনের দু’দিন আগে কামারের কাছ থেকে ধারালো কাটারি কিনেছিল দেবব্রত। তারপরে তা খুনের কাজে ব্যবহার করে। এই কাটারির সন্ধান চালাবে পুলিশ। এমনকী খুনের পর দেবব্রত মৃত শ্যালকের ফোন ব্যবহার করে ৮০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিল নিজের অ্যাকাউন্টে। মৃতের গলার সোনার চেন, ব্রেসলেট খুলে নিয়েছিল অভিযুক্তরা। পুলিশ এই টাকা সহ বাকি জিনিস উদ্ধারের চেষ্টা চালাবে।
সোমবার পুলিশ জানিয়েছে, বারুইপুরের পিয়ালির বাসিন্দা শান্ত মণ্ডল। সে বেঙ্গালুরুতে গাঁজার কারবার করত। হাতে আসছিল মোটা টাকা। বদলে গিয়েছিল চালচলন। গলায় থাকত সোনার চেন। হাতে ব্রেসলেট। পরনে দামি জামা। তাঁর জামাইবাবু দেবব্রতও বেঙ্গালুরুতে থাকত। সেখানে সে খাবার অর্ডার নেওয়ার কাজ করত। কয়েক মাস ধরে তার ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছিল। উল্টো দিকে শ্যালকের ফুলে ফেঁপে ওঠা মেনে নিতে পারেনি জামাইবাবু। তা থেকেই রাগ জন্মায়। পুলিশ জেনেছে, ক্রোধের বসে শ্যালককে খুনের পরিকল্পনা করেছিল দেবব্রত। দুর্গাপুজোয় দু’জনেই বারুইপুরে ফিরেছিল। তারপর থেকেই খুনের জন্য সঙ্গীদের নিয়ে ছক কষছিল দেবব্রত।
কীভাবে মারা হয়েছিল শান্তকে? পুলিশ জানতে পেরেছে, দশমীর দিন সন্ধ্যা ৭. ৩০ নাগাদ শ্যালককে ফোন করে ডাকে জামাইবাবু। দুজনের বাড়ি বেশি দূরে নয়। পরিকল্পনা মতো, হাফিজুল আগে থেকেই অটো নিয়ে তৈরি ছিল রাস্তায়। শ্যালককে নিয়ে ওই অটোয় তোলে দেবব্রত। গাড়িতে বাকি দুজনও ছিল। এরপরে গাড়িতে আকণ্ঠ মদ্যপান করে সবাই। অটো নিয়ে যাওয়া হয় বাসন্তীর দিকে। সেখানেও বসে মদ্যপান চলে। তারপরে রাত সাড়ে ১২টার পর অটো ঘুরিয়ে নিয়ে আসা হয় বেগমপুরের দিকে। সেখানে গাড়ি থেকে নামিয়ে শান্তকে ধারালো কাটারি দিয়ে খুন করে দেবব্রত। পুলিশ আরও জানিয়েছে, খুনের পরে গা ঢাকা দেওয়া তো দূর। শ্বশুর শাশুড়ির কাছে ভালো সেজে থাকে অভিযুক্ত দেবব্রত। এমনকি, মর্গেও গিয়েছিল সে। সেখান থেকে বেরিয়ে নিজের শ্যালকের দেহ শশ্মানেও নিয়ে গিয়েছিল। তবে দেবব্রতর ভাবগতিক দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। তাকে জেরা চালিয়ে মোবাইল ট্র্যাক করে বাকিদের সন্ধান পায় পুলিশ। তারপরে রবিবার গভীর রাতে অভিযুক্তদের বারুইপুরের বেলেগাছি এলাকা থেকে ধরা হয়।