ফের চিকিৎসায় গাফিলতিতে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সোমবার আইসিইউ, সিসিইউ ওয়ার্ডের বাইরে বিক্ষোভ দেখালেন মৃতার পরিজনেরা। খবর পেয়ে হাসপাতালে যান পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক থেকে দুই সদস্যের প্রতিনিধি। হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা যাচ্ছেন ঘটনাস্থলে। সব মিলিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
মৃতার নাম শিখা দে দাস (৩২)। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা থানার নাহাপার গ্রামে। শিখার স্বামী পবিত্র দাস জানান, নয় মাসের প্রসূতি ছিলেন স্ত্রী। রবিবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পবিত্রের কথায়, ‘‘শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল ওর। জরুরি বিভাগে দেখানোর পর ‘মাতৃমা বিভাগে’ (প্রসূতি বিভাগ) নিয়ে যাওয়া হয় শিখাকে। সেখান থেকে আবার মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাত সাড়ে ৮ টা নাগাদ সেখান থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শুধু জ্বর আর কাশি সারানোর ওষুধ দেওয়া হয়। তখনও বড় টিকিট করা হয়নি।’’ তিনি জানান, এর পর রাতে জেলা পরিষদের গেস্ট হাউসে নিয়ে যান স্ত্রীকে। রাত ৩টে নাগাদ আবার শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয় স্ত্রীর। আবার জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আবার ‘মাতৃমা বিভাগে’ পাঠিয়ে দেয়।
এর মধ্যে রোগিণীর শারীরিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে। ভোর ৫টা নাগাদ আইসিইউ, সিসিইউতে পাঠানো হয় তাঁকে। সোমবার ভোর ৬টা নাগাদ মারা যান শিখা।
পরিবারের দাবি, চিকিৎসায় ভুল এবং গাফিলতির কারণে মৃত্যু হয়েছে প্রসূতির। মৃতার ১২ বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। পবিত্র বলেন, ‘‘আমি মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য দফতর, জেলা শাসক, পুলিশ সুপার থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সকলের কাছে লিখিত অভিযোগ করব। মৃত্যুর কারণ না জানানো পর্যন্ত স্ত্রীর দেহ নেব না।’’
এই পরিস্থিতিতে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করে প্রশাসন। গন্ডগোলের খবর পেয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী খোঁজখবর করেন। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দুই সদস্যের একটি তদন্তকারী দলও তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবন থেকে সেই দলটি সোমবারই পৌঁছোবে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে দুই প্রতিনিধি ইতিমধ্যে হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। সুপার ইন্দ্রনীল সেন বলেন, ‘‘ঠিক কী হয়েছে, তার মেডিক্যাল রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছি। সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে। যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। একজন প্রসূতি ও তাঁর শিশুর মৃত্যু হয়েছে।’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ষড়ঙ্গী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবন থেকে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল আসছে।’’