• সাইকেলের সামনে চোঙা মাইক বেঁধে আজও গ্রামে খবর পৌঁছে দেন ষাটোর্ধ্ব মোহন
    এই সময় | ১৪ অক্টোবর ২০২৫
  • সমীর মণ্ডল, মেদিনীপুর

    'আগামী রবিবার গ্রামের আটচালা মঞ্চে অভিনীত হবে যাত্রাপালা। নামভূমিকায় বিখ্যাত শিল্পী...'. 'আগামী শুক্রবার থেকে হলে শুরু হতে চলেছে উত্তম-সুচিত্রার নতুন ছবি...' আশি বা নব্বইয়ের দশকের বহু সিনেমা বা বইয়ে সাইকেলে চোঙা বেঁধে এই ধরনের প্রচারের চিত্র খুবই পরিচিত।

    শুধু সিনেমা বা যাত্রার বিজ্ঞাপনই নয়, রাজনৈতিক কোনও মিটিং, মায় পাড়ার অনুষ্ঠানেও ভরসা ছিল এই চোঙাই। কিন্তু যুগ বদলেছে। চোঙার মাধ্যমে সুরেলা গলায় প্রচারের জায়গা নিয়েছে প্রথমে দু'রঙা পোস্টার, পরে আরও বেশি রংচঙে ব্যানার, হোর্ডিং। কিন্তু বদলের বিপুল স্রোতেও আজও টিকে আছেন মোহন শী। আজও সাইকেলের সামনে বাঁধা চোঙা মাইকে গ্রামের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত খবর পৌঁছে দেন ষাটোর্ধ্ব মোহন।

    নাড়াজোলের ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পরে তাঁর স্মরণে বাজার বন্ধ রাখার ঘোষণাই হোক অথবা সরকারি কোনও শিবিরের প্রচার। চোঙা হাতে হেঁকে যেতে দেখা যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ব্লকের বাসিন্দা মোহনকে। কখনও সুরেলা গলায় ব্যবসায়ী সমিতির তরফে বাজার বন্ধ রাখার আবেদন করেন তিনি। আবার কখনও ঘোষণা করেন কোনও প্রয়োজনীয় তথ্য। তাঁকে দেখলেই যেন এক লহমায় কয়েক দশক পিছিয়ে যেতে হয়।

    মোহন জানালেন, যে সময়ে চোঙাধারী বিজ্ঞাপনকারীদের চাহিদা ছিল তুঙ্গে, তখন থেকেই এই জীবিকায় নামা তাঁর। তাঁর কণ্ঠে এখনও রয়েছে গ্রামবাংলার পরিচিত রং। শুধু যাত্রা বা সিনেমা নয়, রোডশো বা ভোটের প্রচারেও ডাক পড়ত মোহনের। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে মাইকিংও ছিল তাঁর জীবিকা। আজও সেই একই পেশার সঙ্গে যুক্ত তিনি। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, এখন আর আগের মতো কাজ আসে না। মোহনের কথায়, 'আগে তো এলাকায় কোনও কিছুর প্রচার মানেই আমার ডাক পড়ত। এখন লোক ফোনেই সব সেরে নেয়। কখনও রেকর্ড করে মাইক চালিয়ে দেয়। কিন্তু এই মাইকের সঙ্গে আমার জীবনটা জড়িয়ে গিয়েছে। শুধু মাইক কেন, কখনও ঢ্যাঁড়া পিটিয়েও প্রচার চালাই আজও।'

    কিন্তু আজও কিছু জায়গায় দরকার মোহনের মতো মানুষদের। যে সব গ্রামীণ অঞ্চলে এখনও ইন্টারনেট পৌঁছয়নি, সেখানে কিছু প্রচারের জন্য চোঙা মাইকই ভরসা। মোবাইলের স্ক্রিনে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে খবর এলেও সময়ের প্রহরী হয়ে রয়ে গিয়েছেন মোহন শী-রা। প্রযুক্তির দৌড়ে হয়তো হারিয়ে যাবে এই চোঙা মাইক, কিন্তু মানুষের মনে গেঁথে থাকবে মোহনদের এই সুরেলা ধ্বনি কখনও মুছবে না। কালের গর্ভে থেকে যাবে স্মৃতির সুর হয়ে।

  • Link to this news (এই সময়)