• পরপর শিশুমৃত্যু, দেশের তিনটি কাশির সিরাপের বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি WHO'র! ...
    আজকাল | ১৪ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: পরপর শিশুমৃত্যু। দেশ জুড়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে রাজনীতির আঙিনায় চলছে তুমুল চর্চা। চিন্তা সাধারণের মধ্যে।  মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে কমপক্ষে ২১টি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় কোল্ডরিফ কাশির সিরাপ প্রস্তুতকারক স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ, সিরাপে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত শিল্প রাসায়নিক ডাইথিলিন গ্লাইকল পাওয়া গেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর, সংস্থাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।  এই বিষয় নিয়ে তীব্র বিতর্কের মাঝেই বড় সতর্কবার্তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, এককথায় হু জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ভারতে এই ধরনের তিনটি সিরাপ শনাক্ত করেছে। 

    সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালসের কোল্ডরিফ, রেডনেক্স ফার্মাসিউটিক্যালসের রেসপিফ্রেশ টিআর এবং শেপ ফার্মার রিলাইফের নির্দিষ্ট ব্যাচগুলিকে প্রভাবিত ওষুধ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। 

    তামিলনাড়ু-ভিত্তিক একটি সংস্থা স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালস, কোল্ডরিফ কাশি সিরাপ নিয়ে বিতর্কের পর সম্প্রতি এই সংস্থার উৎপাদন-লাইসেন্স সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হয়েছে। ল্যাব পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, সিরাপে ডাইথিলিন গ্লাইকল (DEG) ব্যবহার করা হয়েছে, যা গণ বিষক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত।  সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে তথ্য, WHO জানিয়েছে যে, ভারতে চিহ্নিত সিরাপগুলি বড় ঝুঁকি তৈরি করে ব্যবহারকারীদের জন্য এবং গুরুতর, সম্ভাব্য জীবন-হুমকির কারণ হতে পারে।

    সূত্রের তথ্য, শিশুদের মৃত্যুর পর এবং কোল্ডরিফের প্রস্তুতকারকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর আগে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে নির্দিষ্ট ওই সিরাপটি অন্য দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে কিনা? ভারত থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে WHO একটি গ্লোবাল মেডিকেল প্রোডাক্টস অ্যালার্ট জারি করবে। রয়টার্স সূত্রে তথ্য, যে সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (CDSCO) WHO-কে জানিয়েছে, এই ওষুধ ভারত থেকে রপ্তানি করা হয়নি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নিশ্চিত করেছে যে ওই কাশির সিরাপ সেখানে রপ্তানি করা হয়নি। 

    শিশুমৃত্যু প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, মৃত শিশুদের সেবন করা মোট ১৯টি সিরাপের নমুনা সংগ্রহ করে ওষুধ পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে ১০টি নমুনার পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে, এবং তাতে দেখা গেছে, একটি নমুনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিকারক। এই সিরাপটির নাম ‘Coldrif’, যা তৈরি করেছিল চেন্নাইয়ের কদমবাক্কমে অবস্থিত শ্রীসান ফার্মা সংস্থা। তামিলনাড়ুর পরীক্ষাগারে পাওয়া গেছে, সিরাপটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ডাই–ইথাইলিন গ্লাইকল (DEG), যা এক প্রাণঘাতী শিল্প–রাসায়নিক। যা মানুষ সেবন করলে মারাত্মকভাবে কিডনি ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে।  DEG ও ইথাইলিন গ্লাইকল (EG) কখনওই ওষুধে ব্যবহারযোগ্য নয়। অথচ আগেও ভারতের ভেতরে ও বাইরে এই জাতীয় সিরাপের কারণে বহু শিশুর মৃত্যু হয়েছে। 

    ভারত বিশ্বের বৃহত্তম জেনেরিক ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ। অথচ গত কয়েক বছরে সেই গৌরবময় অবস্থান এখন চরম প্রশ্নের মুখে। ২০২৩ সালে গাম্বিয়া সরকার অভিযোগ করেছিল যে, হরিয়ানার Maiden Pharmaceuticals–এর তৈরি সিরাপের কারণে ৬৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। একই বছর উজবেকিস্তান জানিয়েছিল, Marion Biotech–এর তৈরি কাশি ও জ্বরের ওষুধ খেয়ে মারা গেছে ১৮ শিশু। ২০২৪ সালে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ঘোষণা করে যে তামিলনাড়ুর Fourrts কোম্পানির তৈরি 'Cold Out' সিরাপে DEG ও EG–এর মাত্রা ছিল অনুমোদিত সীমার থেকে বহু গুণ বেশি।

    বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সংস্থা সস্তায় উৎপাদন করতে propylene glycol–এর পরিবর্তে এই বিষাক্ত DEG ব্যবহার করে, যা শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী, মানুষের ক্ষেত্রে নয়। স্বনামধন্য ফার্মাকোলজিস্ট চিকিৎসক সান্তনু ত্রিপাঠীর মতে, “যতদিন না সরকার প্রতিটি ব্যাচে এই ধরনের রাসায়নিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করছে, ততদিন এ ধরনের বিপর্যয় থামবে না।”

     
  • Link to this news (আজকাল)