• 'ধর্ষণ আগেও হয়েছে, আগামীতেও হবে, কোনও সমাধান নেই...', দুর্গাপুর বিতর্কে বেফাঁস চিরঞ্জিত!
    ২৪ ঘন্টা | ১৪ অক্টোবর ২০২৫
  • জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ধর্ষণের সমাধান নিয়ে অদ্ভুত ব্যাখ্যা চিরঞ্জিতের (Chiranjeet)। বারাসাতের (Barassat) বিধায়ক বলেন, 'ধর্ষণের সলিউশন আবার হয় নাকি? যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, মন্তব্য বারাসতের বিধায়কের। রামরাজ্য বলে কিছু ছিল কী না বলতে পারব না। আমি যতদিন শুনছি, ততদিন ধর্ষণের কথা শুনছি। আগেও শুনেছি, এখনও শুনছি, ভবিষ্যতেও শুনব'। অদ্ভুত যুক্তি বারাসতের তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর।

    সম্প্রতি দুর্গাপুরে ঘটে যাওয়া ডাক্তারি পড়ুয়ার ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। ইতোমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে ধর্ষণের ঘটনায় কাউকে রেয়াত করা হবে না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও বলেছেন যে ধর্ষণের কাণ্ডে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। তারই মাঝে তৃণমূল বিধায়কের এহেন মন্তব্য চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। 

    এই মন্তব্যের বিরোধিতায় শতরূপ ঘোষ বলেন, 'আগেও হয়েছে এখনও হচ্ছে কথাটা ঠিকই বলেছেন। তবে এরপরেও হবে, এই কথায় প্রমাণ হয় যতদিন এই মানসিকতার মানুষ হয়েছে, ততদিন ধর্ষণের সমাধান পাওয়া কঠিন। অনেক অপরাধ আমাদের শিহরিত করে, আমরা তার সমাধান চাই। কিন্তু যেভাবে উনি বলে দিচ্ছেন যে এর কোনও সমাধান নেই, বোঝাই যাচ্ছে যে এরা ধর্ষণের সংস্কৃতিকে সাপোর্ট করে। এর আগেও উনি বলেছেন, মেয়েরা ছোট ছোট জামাকাপড় পরে বলে ধর্ষণের শিকার হয়'। 

    প্রসঙ্গত, সোমবার বারাসতের রবীন্দ্রভবন প্রেক্ষাগৃহ মঞ্চে বিজয়া সম্মেলন কার্যত গত লোকসভা নির্বাচনে বারাসত শহরে তৃণমূলের পরাজয়ের সমালোচনায় সরগরম  হয়ে উঠল। এই পরাজয় নিয়ে একসুরে মন্ত্রী,বিধায়ক,সাংসদ থেকে জেলা সভাধিপতির  সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে দলের কাউন্সিলার থেকে কর্মীদের। এক্ষেত্রে দলের কর্মীদের সহিষ্ণু হওয়ার পাঠ দিয়েছেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। লোকসভার পরাজয়ের পাশাপাশি বারাসত পুরসভার নাগরিক পরিষেবার মান নিয়েও এদিন প্রশ্ন তুলেছেন জেলা পরিষদের সভাধীপতি নারায়ণ গোস্বামী।

    সোমবার বারাসত শহর তৃণমূলের উদ্যোগে আয়োজিত হয় বিজয়া সম্মেলন অনুষ্ঠান।দলের বিভিন্ন শাখা সংঘঠনের নেতা কর্মী থেকে হাজির ছিলেন পুরসভার কাউন্সিলারাও।বিজয়া সম্মেলন মঞ্চ হলেও গত লোকসভা নির্বাচনে বারাসত পুরসভায় তৃণমূলের ভরাডুবি নিয়ে এদিন সরগরম হয়ে উঠল রথীন ঘোষ থেকে অভিনেতা বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী , জেলা পরিষদের সভাধীপতি নারায়ন গোস্বামী সহ খোদ বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার।

    মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে  কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, 'এদিনের প্রেক্ষাগৃহ কানায় কানায় ভর্তি। মহিলা সংগঠন নেত্রীরা ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছেন। অথচ বারাসত শহরের ভোটে  আমরা পরাজিত হই। কি করে হয়?এটাই আমার কাছে অবাক করার বিষয়। পুরসভা এলাকায় তৃণমূলের পরাজয় প্রসঙ্গ তুলে ধরে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, বারাসত শহরে আমরা গত লোকসভায় ২২থেকে ২৩হাজার ভোটে হেরেছিলাম। সেটাকে ফিরিয়ে আনতে গেলে কি করতে হবে আপনারা ভাববেন না! দল যদি কলা গাছকে দাঁড় করায়,তাঁকে জেতানোর দায়িত্ব আমাদের। দলের সংগঠনের ব্যাপ্তি বেড়েছে।নেত্রী মাথার উপরে আছেন।কিন্তু সাধারণ মানুষের কথা শোনার মতো সহিষ্ণুতা হারিয়েছেন অনেকেই।সহিষ্ণু হতে হবে দলের কর্মী,নেতাদের তিনি বলেন,দলের কর্মীদের একে অপরের বিরুদ্ধে বিরোধ থাকতেই পারে।কিন্তু তার প্রতিফলন যেন দলের মধ্যে না পরে,সেটা দেখতে হবে।সকলকেই মনে রাখতে হবে,দল থাকলে আমার আছি। না থাকলে কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাবে না'।

    পরাজয়ের সমালোচনার পাশাপাশি নাগরিক পরিষেবা নিয়ে একধাপ এগিয়ে বারাসত পুরসভার সমালোচনার কথা এদিন শোনা গেল জেলা পরিষদের সভাধিপতির তথা অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, 'কাউন্সিলরদের বলব, আপনাদের ভোটে আপনারা অপেক্ষাকৃত বেশি ভোটে জেতেন। তত ভোটে বিধায়ক কেন জেতে না? ঘটনাটা কি? আগামী বিধানসভা নির্বাচন হল চতুর্থ বারের জন্য  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে  মুখ্যমন্ত্রী করার ভোট। সেদিকটা মাথায় রাখতে হবে। স্থানীয় সরকারের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা থাকে। বারাসতের বাসিন্দা হিসাবে আমি বলতে চাই,  কান পাতলে শোনা যায় শহরের নাগরিক পরিষেবা নিয়ে মানুষ আমাদের উপর ক্ষুব্ধ।  সদর শহরের পুরসভার নাগরিক পরিষেবার মান যতটা হওয়া উচিৎ,ততটা নেই। নাগরিক পরিষেবার মান আরও উন্নত করতে হবে।তিনি কারোর নাম উল্লেখ না করলেও তাঁর সমালোচনা কার্যত বারাসতের তারকা বিধায়কের বিরুদ্ধে বলেই মনে করছেন তৃণমূলের কর্মীরা'।

    চিরঞ্জিত চক্রবর্তী  বলেন, 'আমি তো চাই সরে যেতে। একথা মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি। উনি বলেছেন, অনেক দেরি আছে ভোটের। ভোট এলে ভাবব। তাই অস্থির অবস্থায় রইলাম'।

     

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)