• অপারেশন সিন্দুরের সময় কোন পদক্ষেপ নিয়েছিল ভারতীয় নৌবাহিনী যা এখনও কেউ জানে না, জানালেন ডিজিএমও...
    আজকাল | ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:  ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস (DGMO) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই মঙ্গলবার এক বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ করে জানান, গত মে মাসে চার দিনের সামরিক সংঘর্ষের সময় পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়ার আগে ভারতীয় নৌবাহিনী ইতিমধ্যেই আরব সাগরে প্রবেশ করে সম্পূর্ণ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল।

    তিনি জানান, এপ্রিলের পাহালগাঁওতে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারত মে মাসে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত সন্ত্রাসী কাঠামোর ওপর ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে নির্ভুল হামলা চালায়।

    লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাই জাতিসংঘের ট্রুপ কনট্রিবিউটিং কান্ট্রিজ (UNTCC)-এর চিফস’ কনক্লেভে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, “ভারতীয় নৌবাহিনীও তখন সম্পূর্ণ সক্রিয় ছিল—এটি হয়তো অনেকের জানা নেই। নৌবাহিনী আরব সাগরে প্রবেশ করেছিল এবং সেই মুহূর্তে আমাদের অবস্থান ছিল অত্যন্ত কৌশলগতভাবে অনুকূল। ডিজিএমও কথা বলার আগেই আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলাম।” তিনি আরও বলেন, “যদি পাকিস্তান তখন পিছু না হটত, তাহলে ফলাফল তাদের জন্য ভয়াবহ হতে পারত—শুধু সমুদ্রপথেই নয়, অন্য দিক থেকেও।”

    তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলেন, ২২ এপ্রিল থেকে ৬–৭ মে রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছিল এবং সেনাবাহিনী সুনির্দিষ্টভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করছিল। “আমরা সীমান্তে প্রতিরোধমূলক মোতায়েন বাড়িয়েছিলাম যাতে শত্রুপক্ষের কোনও উসকানিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানো যায়। সরকার, সেনাবাহিনী, ও একাধিক গোয়েন্দা ও বেসামরিক সংস্থার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় চলছিল। তিনি বলেন, “আমাদের হাতে ছিল সম্ভাব্য বহু লক্ষ্যবস্তুর একটি তালিকা, যেখান থেকে বাছাই করে চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি, একযোগে একটি অত্যন্ত সমন্বিত ও সক্রিয় তথ্যযুদ্ধ অভিযানও চালানো হচ্ছিল।”

    লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাই আরও উল্লেখ করেন, ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলে এখন এক “নীতিগত পরিবর্তন” এসেছে। তাঁর কথায়, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজেই এবিষয়ে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন। তিনটি মূলনীতি তিনি তুলে ধরেছেন—প্রথমত, সন্ত্রাসী হামলাকে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এর কঠোর জবাব দেওয়া হবে; দ্বিতীয়ত, আমরা কখনও পারমাণবিক হুমকিতে মাথা নত করব না; তৃতীয়ত, সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে কোনও পার্থক্য করা হবে না।”

    এর আগে, জুলাই মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে জানান যে, পাহালগাঁওতে নাগরিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন সন্ত্রাসীকে নিরাপত্তা বাহিনী ‘অপারেশন মহাদেব’-এর সময় হত্যা করেছে।

    ঘাই বলেন, “যে দোষীরা পাহালগাঁও হামলায় জড়িত ছিল, তাদের ভারতীয় সেনা নরকের গভীরতায় গিয়ে হলেও খুঁজে বের করবে—আমরা সেটাই করেছি। আমাদের ৯৬ দিন লেগেছিল, কিন্তু আমরা তাদের বিশ্রাম নিতে দিইনি। শেষ পর্যন্ত যখন তাদের খুঁজে বের করে নির্মূল করা হয়, তখন দেখা যায় তারা পলায়ন ও অনাহারে ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সংসদে এটি উল্লেখ করেছেন—তাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

    লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাইয়ের বক্তব্যে স্পষ্ট হয় যে, ভারত এখন সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সম্পূর্ণ নতুন রণনীতি গ্রহণ করেছে—যেখানে আক্রমণের জবাব কেবল সীমান্তে নয়, তথ্যযুদ্ধ ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও সমানভাবে দেওয়া হচ্ছে।

    ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সাফল্য ভারতের সামরিক সক্ষমতা ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া নীতির প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অভিযানের মাধ্যমে ভারত স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—সন্ত্রাসবাদ ও তার আশ্রয়দাতাদের আর কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।
  • Link to this news (আজকাল)